ডেঙ্গুতে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, সবচেয়ে বেশি বরিশালে

ডেঙ্গু রোগীফাইল ছবি প্রথম আলো

দেশে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই। আজ রোববার ডেঙ্গুতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। আজ দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছে বরিশাল বিভাগে। এ নিয়ে এডিস মশাবাহিত এ রোগে আগ্রান্ত হয়ে চলতি বছর দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৯ জনে। আর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জন।

আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে এর মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়। অর্থাৎ , গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এর আগের ২৪ ঘণ্টায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪৪ জন পুরুষ এবং ২৯৬ জন নারী। একই সময়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৩ জন রোগী।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নাজুক হয়ে গেছে। এখন যে অবস্থা তাতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোনো নতুন ধরনের উদ্যোগ দেখা গেল না। সেই গতানুগতিক ধারাতেই চলছে সবকিছু।

বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, এই ১২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন জন ও দুজন বরগুনায় মারা গেছে। বাকি সাতজনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির হাসপাতালগুলোতে তিনজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় দুজন এবং চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছে। সর্বশেষ মৃত্যুর তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ ছিল, তবে একদিনে এত বেশি মৃত্যুর নজির এ বছর প্রথম। এ মাসের ১১ তারিখ ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আজকের আগে এটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সভিত্তিক রোগী ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

দেশে ২০০০ সালে যখন নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় তখন তা ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক রোগ। কিন্তু দিন দিন এটা ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত বছর থেকেই ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়িয়েছে ব্যাপকহারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৫৪ জন। আর ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৭৭ জন।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখানে বিশেষ করে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ আছে। কিন্তু দেশের অন্যত্র এটা প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পৌরসভাগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেই। আবার ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গায় ডেঙ্গুর চিকিৎসারও কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। চলতি বছর দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর অর্থ হলো, বেশির ভাগ রোগী একেবারের মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছেছে।