ষড়যন্ত্র ঠেলে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাব

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল সোমবার। সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের এটিই শেষ বাজেট। কারণ, আগামী বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ পরিষদের ঘোষিত সর্বশেষ বাজেট, নগরের বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে টানা দুবারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে।

আরিফুল হক চৌধুরীর

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি এবার ১ হাজার ৪০ কোটি ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আয় ও সমপরিমাণ ব্যয় ধরে বাজেট ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকা সরকার ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে করপোরেশন। যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা না পান, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন করবেন কীভাবে?

আরিফুল হক চৌধুরী: নিজস্ব আয়ের পাশাপাশি সরকার ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে, এর চুলচেরা হিসাব–নিকাশ করেই বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই টাকা বরাদ্দ না পাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখেই ব্যয়ের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

বাজেট বক্তৃতায় আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন...

আরিফুল হক চৌধুরী: সিলেটের জনগণের ভোটে দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি, এটা আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য। তবে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর দুই বছরেরও বেশি সময় আমাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হয়ে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এখনো আমার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। জনগণের স্বার্থে সিলেটের উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে আমি অনেক ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছি। তবে আমাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। সুষ্ঠু নাগরিক সেবা নিশ্চিতে শত বাধাবিপত্তি ঠেলে আমি এগিয়ে চলব।

প্রশ্ন :

বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়েও বাজেটে কথা বলেছেন। তবে জলাবদ্ধতা তো এখনো নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে।

আরিফুল হক চৌধুরী: জলাবদ্ধতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেকটা কমেছে। তবে নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নালা-নর্দমার পানি সহজে গিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। এ অবস্থায় দ্রুত নদী খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া শহরতলির চা-বাগানের ছড়াগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। এতে বৃষ্টি হলেই এসব ছড়া দিয়ে শহরের ভেতরে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। তবে জলাবদ্ধতা দূর করতে নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া, খাল খননের পাশাপাশি সেসব স্থানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ করছে। এ সমস্যা দূর করতে নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এ বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

একটি আধুনিক বড় মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে যদি বলতেন।

আরিফুল হক চৌধুরী: আমাদের মেয়াদে কাজটি শুরু করা যাবে কি না, তা বুঝতে পারছি না। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্পটি দাখিল করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নামের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ কমপ্লেক্সে কমার্শিয়াল হাব, হেরিটেজ মার্কেট, শেখ রাসেল পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, মিলনায়তন, ফেয়ার প্লেসসহ নানা সুবিধা থাকবে। এটি হবে সিলেটের সবচেয়ে আধুনিক ও বড় মার্কেট কমপ্লেক্স।

প্রশ্ন :

কারিগরি শিক্ষাকে আপনি বাজেটে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরিফুল হক চৌধুরী: এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষায় গড়ে তুলতেই কারিগরি শিক্ষাকে বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেভরন ও সুইস কন্টাক্টের যৌথ উদ্যোগে নগরের চৌহাট্টা এলাকার ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয় ভবনে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চলতি বছরেই চালু করা হবে। এখানে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। শুরুর দিকে এখানে ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন ও মেইনটেন্যান্স, হাউসকিপিং কোর্স বিষয়ে পাঠদান করা হবে। এতে এখানকার প্রশিক্ষণার্থীরা শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়েও নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

প্রশ্ন :

নগরবাসীর পানির সমস্যার বিষয়টি আপনি বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন...

আরিফুল হক চৌধুরী: যেহেতু কিছুদিন আগে সিলেটে ওয়াসা গঠন করা হয়েছে; তাই দ্রুত যেন ওয়াসার কার্যক্রম শুরু হয়, সে বিষয়টি আমি বাজেট বক্তৃতায় বলেছি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে যেন সিলেটবাসীকে পানির জন্য দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়; তাই ওয়াসার কার্যক্রম দ্রুত শুরুর তাগাদা দিয়েছি। তবে এখন সিটি করপোরেশনই নগরবাসীকে পানি সরবরাহ করে আসছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, পানি উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রম আরও বিস্তৃতভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে সিলেট ওয়াসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন :

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের অনুমোদন নেওয়াসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর কোনো সমাধান বাজেটে দিয়েছেন কি?

আরিফুল হক চৌধুরী: হ্যাঁ, বিষয়টি বাজেটে উল্লেখ করেছি। একটি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের বিষয়টি আমরা বলেছি। এ প্রকল্পের আওতায় একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে নাগরিকেরা স্থাপনা ও ইমারত তৈরির অনুমোদন পেতে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনেই নাগরিকেরা তাঁদের আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা, বিল পরিশোধ এবং অনুমোদন প্রাপ্তিসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনই দুর্নীতিও রোধ হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সিলেট নগরের সীমানা বেড়েছে। ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটারের সিলেট নগরের নতুন আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। ২৭টি ওয়ার্ড থেকে ৪২টি ওয়ার্ড হয়েছে এখন। বর্ধিত এলাকার জনগণের উন্নয়নের জন্য বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা আছে?

আরিফুল হক চৌধুরী: আমরা এর মধ্যে বর্ধিত এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি দেখভাল করছি। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোয় নাগরিক সেবা নিশ্চিতে চেষ্টা করছি। একই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে বর্ধিত এলাকার মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে।