জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে
ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণ কখনোই বিএনপি-জামায়াত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে ও তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ রোববার বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী—এরা কোনো দিন এ দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কখনো মেনে নেবে না।’

বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে যে কাজগুলো করেছে, সেগুলো ঘরে ঘরে মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) মানুষের কাছে বারবার মিথ্যা বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই সত্য করতে চায়। কিন্তু তাদের আমলে মানুষ কী পেয়েছে—খাবারের জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেছে, শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি চেয়েছিল বলে রমজান মাসে ২৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া, ১৮ জন কৃষক সার চেয়েছিল বলে তাঁদের হত্যা করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের এগুলোই রেকর্ড, তারা এগুলোই করে গেছে। আর আজ সারও কারও কাছে চাইতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি, এখন থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র ডায়াবেটিসের রোগীদের বিনা মূল্যে ইনসুলিনও প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

নজর রাখতে হবে, কেউ যেন খাদ্য মজুত বা কালোবাজারি করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।...আমরা দেশের কোনো মানুষকে কষ্টে থাকতে দেব না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তবে মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতিদের মনে কষ্ট হয় বলে তাঁর মনে হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মনে রাখতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনিই এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই তাঁর বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্ন কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষার আলো বঞ্চিত থাকবে না—প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ এবং তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন তাঁর বাংলাদেশ সেভাবেই বিশ্বদরবারে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আওয়ামী লীগ এবং এর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বিএনপির অপপ্রচারের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। এত মিথ্যা কথা তারা পায় কোথায় থেকে? আমরা নাকি দেশের কোনোই উন্নয়ন করিনি, সবকিছু ফোকলা ও ধ্বংস করে দিয়েছি! আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল করেছি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি। একদিনে ১০০ সেতু, ১০০ সড়ক নির্মাণ কোনো সরকার করতে পেরেছে? এসব কি উন্নয়ন না। চোখ থাকতেও কেউ অন্ধ হয়ে থাকলে তাদের কিছুই চোখে পড়ে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনা সভায় উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি। দেশের উন্নয়ন না হলে এত বড় বাজেট কীভাবে দিলাম? তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। এ কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব আমরা হতে দিইনি। এসব কি উন্নয়ন নয়?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে জন্ম বলে যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এরা মানুষের জন্য কিছুই করেনি। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া—এদের তো শিকড় নেই।

খালেদা জিয়ার পরিবারের বিপুল অর্থবিত্ত কীভাবে হলো, সেই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর্যন্ত টিভিতে দেখানো হলো জিয়া কিছু রেখে যায়নি। তাহলে সরকারে আসতে না আসতেই কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এরা হলো?

যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব আমরা হতে দিইনি। এসব কি উন্নয়ন নয়?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য যা যা প্রয়োজন, তাঁর সরকার তার ব্যবস্থা করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সবার নজর রাখতে হবে, কেউ যেন খাদ্য মজুত বা কালোবাজারি করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ১ কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য দিচ্ছি। ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে চাল প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজন হলে আরও ৫০ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনব। আমরা দেশের কোনো মানুষকে কষ্টে থাকতে দেব না।’