সমাজসেবা অধিদপ্তরে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ৪৬৩ জনকে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাঁচ বছর পার হলেও নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রত্যাশীরা। এই পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন তাঁরা।
২০১৮ সালের ৯ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর পেরিয়ে যায় চার বছর। অবশেষে ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর হয় লিখিত পরীক্ষা। আর চলতি বছরের মার্চে হয় মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু এখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই এবার পবিত্র হজে গিয়েছিলেন। এ কারণে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরে ৯৬০টি শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৮ সালের ৯ জুলাই পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, হাউজ প্যারেন্ট কাম টিচার পদে ১৩ জন, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ১০ জন, ফিল্ড সুপারভাইজার পদে ৫০ জন, ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে ৪৬৩ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৫৭ জন, গাড়িচালক পদে ১২ জন এবং অফিস সহায়ক পদে ২৫৫ জনকে নিয়োগ দেবে অধিদপ্তর।
এই সাত পদের বিপরীতে আবেদন করেন পাঁচ লাখের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী। এর মধ্যে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদটি স্থায়ী, ১৬তম গ্রেডের। এই পদ বাদে বাকি পদগুলোয় পরীক্ষা ও নিয়োগ হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। কিন্তু কপাল খোলেনি ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের ৪৬১ জনের। পরীক্ষা দিলেও ফলাফলের অপেক্ষায় দিন কাটছে তাঁদের।
পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, এমন তিন চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। তবে তাঁরা নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাঁদের আশঙ্কা, নাম-পরিচয় জানালে পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাঁরা বলেন, অসৎ কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে দুবার লিখিত পরীক্ষা স্থগিত হতো না। মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরও ফলাফল প্রকাশে এতটা দেরি হতো না। তাঁদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চাকরিপ্রত্যাশী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে দুই দফায় লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে গত বছরের ২১ অক্টোবর এই পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় আড়াই লাখ চাকরিপ্রত্যাশী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী গত মার্চে মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) দেন। কিন্তু এরপর আর ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে গত বছরের ২১ অক্টোবর এই পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় আড়াই লাখ চাকরিপ্রত্যাশী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী গত মার্চে মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) দেন। কিন্তু এরপর আর ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নিয়োগ চূড়ান্ত না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেছেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। এই সংখ্যাটা অনেক বেশি হওয়ায়, সময়ও বেশি লাগছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই এবার পবিত্র হজে গিয়েছিলেন। এ কারণে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য শুরুতে পরীক্ষা নিতে গড়িমসি করা হয়েছে।
আর এখন ফল প্রকাশে বিলম্ব করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ঝুলে রয়েছে নিয়োগপ্রক্রিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন চাকরিপ্রত্যাশী প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিক পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে তাঁদের। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার আশা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। এটি তাঁদের শেষ সুযোগ। তাই দ্রুত ফলাফল প্রকাশের দাবি তুলেছেন তাঁরা।