সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্যের মিশেলে বাংলাদেশের স্থাপত্য বৈশ্বিক অঙ্গনে স্বাক্ষর রেখেছে। দেশের তরুণ স্থপতিদের বাছাই করা ৬০টি স্থাপত্যকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে স্থাপত্য প্রদর্শনী ‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’।

৯ ডিসেম্বর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান ও ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাটালি চুয়ার্ড।

মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়, সাংস্কৃতিক বিকাশেও কাজ করছে।

‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। গত শুক্রবার ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজের প্রশংসা করে বলেন, স্থাপত্যকে একটি শিল্প হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। তাদের জাতীয় পুরস্কার যেমন—একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘স্থপতিরা অনেক ভালো কাজ করলেও আমরা এখনো নানাভাবে দেশের ঐতিহ্য হারাচ্ছি। ঢাকায় বেশ কিছু পুরোনো ভবন আছে, যেগুলোকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ, এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপিত হয়। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশা ব্যক্ত করে নাটালি চুয়ার্ড বলেন, বাংলাদেশের স্থাপত্য সম্পর্কে ইউরোপের জানার সবচেয়ে ভালো উপায় এই প্রদর্শনী।

আগের দিনের বাঁশের কাঠামোর বদলে এখন বেটন ব্রুটের কংক্রিট দেয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত ইটের তৈরি বাংলা ধাঁচের জালি কাজগুলো ধীরে ধীরে অর্ধস্বচ্ছ ফেব্রিকে রূপান্তরিত হয়েছে। বঙ্গীয় বদ্বীপের স্থাপত্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের এই দোলাচল এ দেশের স্থাপত্যে আধুনিকতাবাদের উপস্থিতির প্রমাণ দেয়। বাংলার অগ্রজ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ও আধুনিকতাবাদের গুরু লুই কানের স্থাপত্যকর্মেও এই মেলবন্ধন লক্ষণীয়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই তরঙ্গকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের সেসবের ধারণা দেবে।

বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ প্রদর্শনীটি সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টসের যৌথ প্রযোজনায় নানা দেশে প্রদর্শিত হয়েছে। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন নিক্লস গ্র্যাবার, আন্দ্রেয়াস রুবি ও ভিভিয়ান এহরেন্সবার্গার। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রকল্পের মূল ড্রয়িং, মডেল, আলোকচিত্র ও স্থাপত্য সম্পর্কিত নানা নথি দেখা যাবে। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাজেলে ‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীটি শুরু হয়। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমসাময়িক স্থাপত্যের উদ্ভাবন ও ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা হয়। পরে প্রদর্শনীটি ফ্রান্সের বোর্দোতে আর্ক এন রিভ সেন্টার ডি আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফ্রুর্টে ডয়েশ আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রদর্শনীটি ঢাকায় এসেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের, মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী প্রমুখ।