আলেমদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাঠ্যবই পর্যালোচনার দাবি হেফাজতের

রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত ফেনী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছবি: তানভীর আহাম্মদ

একশ্রেণির ধর্মবিরোধী গোষ্ঠী দেশের মুসলিম প্রজন্মের মন থেকে ইসলামি ধ্যানধারণা মুছে দেওয়ার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির দাবি, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীন সংকলিত পাঠ্যপুস্তককে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী বিষয়বস্তু সুপরিকল্পিতভাবে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে।

এসব কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতায় প্রণীত প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তারা বলছে, হেফাজতের আপত্তির বিষয়গুলো চিহ্নিত, সংশোধন ও আলেমদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাঠ্যপুস্তক আবার বিতরণ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত ফেনী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

যেসব দাবিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়, সেগুলো হচ্ছে ‘জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাতিল, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন-২০২৩ (খসড়া) পাস না করা, কাদিয়ানিদের সালানা জলসা বন্ধ, মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেম-ওলামাদের মুক্তি, হেফাজতের নামে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমের প্রভাব থাকে। নাগরিকদের চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারণা ও নীতি-নৈতিকতা গঠনে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবের বিষয়টি অনস্বীকার্য। আলেম সমাজের দাবি থাকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম কোনোভাবেই ইসলামি চিন্তাচেতনার বিপরীত যেন না হয়।

ট্রান্সজেন্ডার আইনের প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া)’ আইনটিকে হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা আইন মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইনটিকে ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী উল্লেখ করে এটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে অনেক আলেমকে ‘বিনা অপরাধে’ কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁরা যতটুকু আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখেন, সে ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, মাহমুদুল হাসানসহ কারাগারে বন্দী হেফাজত নেতাদের বিনা শর্তে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পঞ্চগড়ের আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী সালানা জলসার আয়োজন করতে যাচ্ছে। অবিলম্বে এ জলসা বন্ধের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই জলসাকে ঘিরে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার প্রশাসন ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব সাজেদুর রহমান, সহসভাপতি মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী, যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল ইসলাম, হারুন ইজাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।