বৃষ্টি বাড়ছে, উত্তাল সাগর

বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক ও অলিগলি। চট্টগ্রাম, ৪ আগস্ট
ছবি: জুয়েল শীল

গত মাসের বড় সময়জুড়ে পাল্টাপাল্টি চলেছে বৃষ্টি আর তাপপ্রবাহ। সব মিলিয়ে জুলাইয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে নতুন মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে। উত্তাল হয়ে উঠছে সাগরও।

গতকাল শুক্রবার বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে শুরু করে রাজধানীজুড়ে ভারী বৃষ্টির দাপট ছিল দিনভর। ছিল দমকা হাওয়া। দুই দিন ধরে দিনে দুই বার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। এদিকে জোয়ারের তোড়ে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন ধরে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, গতকাল রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় রীতিমতো ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় সারা দিনে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে দুপুর থেকে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার কষ্ট বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিন সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে, ১৮৮ মিলিমিটার।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবারও ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

সাগর উত্তাল থাকায় দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে সাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে।

বর্ষায় কম বৃষ্টিতে জনস্বাস্থ্যে প্রভাব

দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। কিন্তু চলতি বছর ও গত বছর এ মাসে গড় বৃষ্টির অর্ধেকও হয়নি। গত বছরের জুলাইয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাসে কম বৃষ্টি হয়েছিল। এবার সামান্য বাড়লেও তা অর্ধেকের কম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫১ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে গত বছরের জুলাইয়ে কম বৃষ্টি হয় প্রায় ৫৮ শতাংশ।

বর্ষার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, বর্ষার সময় তাপ বাড়লে ডায়রিয়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগ বেড়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এসবের প্রবণতা বেড়েছে।

অতি তাপ এবং বর্ষার সময় কম বৃষ্টির প্রভাবে টাইফয়েডসহ নানা রোগ বাড়ছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পরিবেশটা ভিন্ন রকম হয়ে যাচ্ছে। অতি গরম, আবার বৃষ্টির সময় বৃষ্টি নেই। এর ফলে পানিবাহিত রোগী এখন বেশি দেখছি। পাশাপাশি শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগও বাড়ছে।’