‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি ছাত্রনেতাদের

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না–রাখা নিয়ে দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটে। গত বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনেছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মতিঝিলে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান তাঁরা।

‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে রোববার বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডসংলগ্ন ডিএমপি সদর দপ্তরে যান ছাত্রনেতারা। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

রাফিকুজ্জামান ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে হামলার মূল ক্রীড়নক ও নির্দেশদাতাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেদিন ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এমন দুজনকে শুধু গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্র জোটের সমন্বয়ক বলেন, সেদিন পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। হামলার পরদিন পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। জুলাই-আগস্টের মতো পুলিশ সেদিন সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ব্যবহার ও বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতাকে লাঠিপেটা করে। সেই হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেছেন, পুলিশের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁর অনুমোদন ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে কমিশনারের কাছে তাঁরা পুলিশের এই ভূমিকা সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন।

রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কাউকে কোনো ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। সাধারণ চুরি–ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এসব ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।

কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পরে এ বিষয়ে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কমিশনার ছাত্রনেতাদের আশ্বস্ত করেছেন।

ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার ‘আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ওপর ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির’ হামলায় অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার এবং একই সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অবিলম্বে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

বৈঠক সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার পক্ষে আরও অংশ নেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের মহিদুল ইসলাম, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জেএসডি) সভাপতি তৌফিকুজ্জামান পিরাচা, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আল-আমিন রহমান প্রমুখ।