ড. ইউনূসের পক্ষে বিদেশিদের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে ৫১০ আইনজীবীর বিবৃতি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত উত্তর হলে আজ সোমবার এক ব্রিফিংয়ে সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ জন আইনজীবীর বিবৃতি তুলে ধরা হয়
ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবিতে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রেরিত খোলাচিঠির প্রতিবাদে’ আওয়ামী লীগপন্থীসহ সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ জন আইনজীবী বিবৃতি দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ জন আইনজীবীর বিবৃতির বিষয়টি আজ সোমবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত উত্তর হলে ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

আইনজীবীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রত্যাশা সম্মানিত বিদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে ড. ইউনূসের পক্ষে তাঁদের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে বাংলদেশের বিচারব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকে নিজেদের নিবৃত রাখবেন।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সই করা লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে ৫১০ আইনজীবীর বিবৃতি ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ ও মোমতাজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। গত ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এ চিঠি প্রকাশ করে।

৫১০ জন আইনজীবীর সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের লেখা খোলাচিঠি তাঁদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে চলমান মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে তাঁরা বিবেচনা করছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে তাঁরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

বিবৃতিদাতা আইনজীবীরা বলেছেন, আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান। যেকোনো সভ্য দেশে কেউ অপরাধ করলে সে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে—এটাই স্বতঃসিদ্ধ। আমরা ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি যে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শ্রমিকেরাই দেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছেন। ওই খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিদেশি নাগরিকেরা ভুক্তভোগী শ্রমিকদের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে অন্যায়ভাবে ড. ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় বিবৃতি প্রদান করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের আলোকে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকার আদেশের পর বিদেশি সুশীল নাগরিকেরা ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এই অনুরোধ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের অসম্মান প্রদর্শন করারও শামিল, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বা সরকার কর্তৃক কোনো মামলা প্রত্যাহার, স্থগিত বা বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন ৫১০ জন আইনজীবী। তাঁরা বলছেন, এ ছাড়া বাংলাদেশ আইএলও এবং জাতিসংঘের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসংক্রান্ত দলিলের অনুস্বাক্ষরকারী হিসেবে এ–সংক্রান্ত সব অনুশাসন সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করে।

ব্রিফিংয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘সারা বিশ্বে আমরা সম্মান পেয়েছি। এটি ধরে রাখতে হবে। এটি ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’  

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘এই বিবৃতি সাধারণ আইনজীবীদের। সাধারণ আইনজীবী যাঁরা আছেন, তাঁরা এই বিবৃতি দিয়েছেন। এটি চলমান প্রক্রিয়া, আরও আসবে। আইনজীবীরা আজকে ঐক্যবদ্ধ।’

বিবৃতিদাতা ৫১০ জনের মধ্যে আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, এস এম মুনীর, বশির আহমেদ, মো. আবদুন নূর দুলাল, লায়েকুজ্জামান মোল্লা, আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, শাহ মঞ্জুরুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ, মো. রবিউল আলম বুদু, মোতাহার হোসেন সাজু, মোহাম্মদ আলী আজম, জেসমিন সুলতানা, এম মাসুদ আলম চৌধুরী, মো. আব্দুর রাজ্জাক, এ বি এম নূর–এ–আলম উজ্জ্বল, মোহাম্মদ হারুন–উর রশিদ, মো. মনিরুজ্জামান রানা, শফিক রায়হান শাওন প্রমুখ রয়েছে।

এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক ব্যবস্থা’ বন্ধ এবং তাঁর বিরুদ্ধে সব ধরনের ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর বিএনপিপন্থীসহ সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ জন আইনজীবীর বিবৃতি দিয়েছিলেন।