সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাবে মুক্তি মিলছে না নারীর

নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা। গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরেছবি: জাহিদুল করিম

ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও নারীদের প্রতি বৈষম্য চলছেই। নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাবের কারণে নারীদের মুক্তি মিলছে না।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারী ও মানবাধিকারকর্মীদের কথায় উঠে এলো নারীর প্রতি বৈষম্যের এসব বিষয়। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার নারী অধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক–রাজনৈতিক সংগঠন সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রার মতো নানা কর্মসূচি পালন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন পরিবর্তন করো, নারীর অগ্রসর হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করো’ প্রতিপাদ্যে সমাবেশ করে নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এমন ৬৬টি সংগঠনের একটি প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। সমাবেশের ঘোষণায় বলা হয়, নারীর জন্য প্রচলিত ক্ষতিকর প্রথা, পারিবারিক আইনসহ বৈষম্যমূলক অন্য আইন, ধর্মের নামে নানা বিধিনিষেধ ও নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণায় প্রতিনিয়ত নারীর মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘিত হচ্ছে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। তবে দেশে যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে এখন তাতে করে কোনো রাজনৈতিক শক্তিই বিকশিত হতে পারছে না। সমাজে সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। এতে নারী সমাজের মুক্তি মিলছে না।

‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ স্লোগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শপথ গ্রহণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের ছাত্রী, নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতা, বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির শোভাযাত্রা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

নারী দিবস উপলক্ষে জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘নারীর জন্য বিনিয়োগ: উন্নয়নে করবে গতিযোগ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জাসদের সহযোগী নারী সংগঠন জাতীয় নারী জোট। সভার প্রধান অতিথি জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, নারী-পুরুষের জন্য সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার চেতনাকে ধারণ করে নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

‘বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তন করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন’ শিরোনামে রাজধানীর কড়াইল ও সাভারের আশুলিয়ায় পৃথক কর্মসূচি পালন করে লিগ্যাল এইড ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
নারী দিবস উপলক্ষে ৭ জন আলোকিত নারীকে সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। নারী দিবস নিয়ে আলোচনা সভা করেছে শ্রমজীবী নারী মৈত্রী। শোভাযাত্রা করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।

নারীপক্ষের সংগীতানুষ্ঠান

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সংগঠনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা নারীপক্ষ। গতকাল বিকেলে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় ‘মোরা আকাশের মতো বাধাহীন’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আওয়াজ তোলে ‘ঐক্যতান’। এর পরে নারী দিবসের আহ্বান ও ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের ঊর্ধ্বতন ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা মনীষা মজুমদার। ফিলিস্তিন নিয়ে লেখা পাঠ করেন নারীপক্ষের কোষাধ্যক্ষ রেহানা সামদানী। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কাঙালিনী সুফিয়া ও ব্যান্ড চিরকুট। নারীপক্ষের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও সাধারণ জনতা এতে অংশ নেন।