বুয়েটের অচলাবস্থা পুরোপুরি কাটেনি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অচলাবস্থা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তবে স্থগিত হওয়া ও শিক্ষার্থীদের বর্জন করা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে।

বুয়েটে সাধারণত সব ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা একসঙ্গে শুরু হয়। পরীক্ষার পুরো সময়টাতে কোনো ব্যাচেরই ক্লাস থাকে না। গত ৩০ মার্চ থেকে বুয়েটে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঈদের আগে ও পরে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা বর্জন করেন বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষাপটে গত শনিবার পরীক্ষাগুলোর তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে পুনরায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিল। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষের জারি করা ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রমে হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, তারা কপি পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ২৯ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।

পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ

বুয়েটের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষার বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ের প্রতি ব্যাচের শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিজ নিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করে পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করবেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। সব বিভাগের সব ব্যাচের পরীক্ষার পুনর্নির্ধারিত তারিখের প্রস্তাব পাওয়ার পর সব বিভাগীয় প্রধানসহ শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ডিন ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে প্রস্তাব প্রণয়ন করবেন। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত প্রস্তাব একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। দুটি বিভাগের দুজন শ্রেণি-প্রতিনিধি প্রথম আলোকে জানান, বিভাগীয় প্রধানেরা তাঁদের ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁদের মতামত শুনেছেন। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে শিগগিরই একাডেমিক কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করবেন বলে বিভাগীয় প্রধানেরা তাঁদের জানিয়েছেন। বিভাগীয় প্রধানেরা পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওই দুই শ্রেণি-প্রতিনিধি।

বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রভাগে থাকা একজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের আশা, ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ কাজটি শেষ হবে, তা বলতে পারছি না।’

এদিকে ঈদের আগে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থান দেখা গিয়েছিল। মৌলবাদী গোষ্ঠীর ‘কালো ছায়া’ থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে ৩১ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল ছাত্রলীগ। সমাবেশের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। বুয়েটের ছাত্রলীগ-সমমনারা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈদের পর সরকার বা ছাত্রলীগের কোনো পর্যায় থেকে বুয়েটের বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের মধ্যে যেসব উদ্বেগ বা শঙ্কা রয়েছে, সেগুলোর নিরসন করে তাঁরা বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে চান। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মধ্যে আছেন। ছাত্রলীগ চায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন থাকুক। সব মিলিয়ে ছাত্রলীগ বুয়েটের বিষয়ে সময় নিয়ে এগোচ্ছে।

আইনি পদক্ষেপ নেবে বুয়েট

বুয়েট কর্তৃপক্ষের জারি করা ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় গত শনিবার বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হাইকোর্টের আদেশ হাতে পাওয়ার পর সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে।

আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলার জন্য আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে নাম চেয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক দিন ধরে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদেশের (হাইকোর্টের) কপিটা পেলে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’