নাজমুল হাসান, সাকিব আল হাসানসহ তিনজনের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান (পাপন), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (পুরুষ) অধিনায়ক সাকিব আল হাসান
ফাইল ছবি

বিশ্বকাপে ‘ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে’ নিয়ে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান (পাপন), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (পুরুষ) অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অ্যাডভোকেট হাসান অ্যান্ড এসোসিয়েটস চেম্বার থেকে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আজ রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ঠিকানায় ওই নোটিশ পাঠান।

নাজমুল হাসান পাপন ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নোটিশের শেষাংশে বলা হয়, ‘আপনি/আপনারা নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কোচিং স্টাফ ও নির্বাচক কমিটি বাতিল করবেন। একই সঙ্গে আইসিসি পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩–এ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এ ছাড়া উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নিজস্ব কোচ তৈরি; আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলো যে ধরনের উইকেটে হয়, তার অন্তত কাছাকাছি মানের উইকেটে ঘরোয়া লিগ আয়োজন; স্কুল ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও প্রশিক্ষণের আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে আপনি/আপনারা (নাজমুল হাসান পাপন, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও সাকিব আল হাসান) আইসিসি পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩–এ ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে সমগ্র জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।’

অন্যথায় প্রচলিত আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। তিনি বলেছেন, সে ক্ষেত্রে অহেতুক মামলায় জড়ানোর জন্য যাবতীয় ক্ষতিপূরণ নোটিশ প্রাপকদেরই বহন করতে হবে।

নোটিশে বলা হয়, আইসিসি পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ ছিল বাংলাদেশের জন্য ব্যর্থ মিশন। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল শুভসূচনা করে। ধর্মশালায় সেই ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও কেউ ধারণা করতে পারেনি, এমন বাজেভাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হবে।...২০১৯ সালে ৯ ম্যাচের তিনটি জিতলেও ৭ নম্বরে থেকে আসর শেষ করে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল। কিন্তু কোনোবারই সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যাশা ছিল না। এবার ছিল বলেই ব্যর্থতাকে এত বড় মনে হচ্ছে। ইডেনে নামার আগে সেটি স্বীকার করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ইডেনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, এটিই বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ কি না? উত্তরে সাকিব আল হাসান বলেছেন, “এটা আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, আমি দ্বিমত পোষণ করব না। এটা বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।” ২৪ বছরে সেমিফাইনাল খেলতে না পারা প্রসঙ্গেও সাকিব আল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, “বলা মুশকিল। ভুল মানুষকে জিজ্ঞেস করছেন। এখন এগুলো বলার সময় নয়। ২৪ বছরে সেমিফাইনাল খেলতে পারিনি, এটা হতাশাজনক। আমাদের এর থেকে অনেক ভালো করা উচিত ছিল।” অর্থাৎ বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজ দলের বাজে পারফরম্যান্স অকপটে স্বীকার করেছেন, যা অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ব্যর্থতাকে সুস্পষ্ট করেছে। এ ছাড়া মাঠের খেলার বাইরে এবারের বিশ্বকাপে তিনি টুর্নামেন্টের মাঝে দলকে ফেলে দেশে এসেছিলেন অনুশীলন করতে! এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময়ে খেলা চলাকালে বিজ্ঞাপনের শুটিং করে সমালোচিত হয়েছিলেন, যা আপনার কাছে কাম্য নয়। আপনার মতো একজন উঁচু মাপের খেলোয়াড়ের কাছে সমগ্র জাতি আরও পেশাদারত্ব ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।’

আইনি নোটিশের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার জন্য যে মান ও দক্ষতার প্রয়োজন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটার সেই জায়গাটায় পিছিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো এখনো পড়ে আছে প্রাচীন যুগে। বাংলাদেশে খেলা হয় ধীরগতির মন্থর উইকেটে। আধুনিক কৌশল ও প্রযুক্তির চর্চা নেই। বেশির ভাগ ক্রিকেটারই জাতীয় দলে এসে শেখেন, যেটা আদতেই শেখার নয়; বরং পরীক্ষা দেওয়ার জায়গা।...বাংলাদেশের ক্রিকেট চলে এখনো পুরোনো পন্থায়। ক্রিকেট খেলা বেশির ভাগ দেশই উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব কোচ তৈরি করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আজ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ গ্রহণ না করে বরং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশি কোচিং স্টাফ আনতেই বেশি আগ্রহী।...দীর্ঘ ছয় বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি পানির নিচে তলিয়ে আছে। আউটার স্টেডিয়ামের অবস্থাও একই। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্যবহার না হওয়ায় অযত্ন আর অবহেলায় স্টেডিয়ামের মূল গ্রাউন্ড, গ্যালারিসহ সবকিছু ধ্বংসপ্রায়। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এসব ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি। আবার জাতীয় দলের শীর্ষ খেলোয়াড়েরা অতিরিক্ত অর্থের আশায় বিদেশি লিগ খেলতে এবং বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী। ফলে জাতীয় দলের প্রতি তাঁদের যথাযথ পারফরম্যান্স ও কমিটমেন্টের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অথচ এ ব্যাপারেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করেছে। যার দায়ভার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।’