বিজ্ঞান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে অযৌক্তিক ভীতি ঢোকানো হয়েছে

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ-বিজ্ঞানচিন্তা ‘ইয়ুথ ফর সায়েন্স ২০২২’–এর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অতিথিরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৫ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে অযৌক্তিক ভয় রয়েছে। স্কুল-কলেজগুলোয় বিজ্ঞানের ব্যবহারিক শিক্ষারও অভাব রয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে তরুণদের বিজ্ঞান সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। দেশের তরুণদের বিজ্ঞান সচেতন করতে ছয় বছর ধরে কাজ করছে বিজ্ঞানচিন্তা।

আজ শনিবার ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ-বিজ্ঞানচিন্তা ‘ইয়ুথ ফর সায়েন্স’ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রশাসনিক ভবনে প্রতিযোগিতার সমাপনী পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। ফিউচার ফার্মিং বাংলাদেশ এবং বিজ্ঞানচিন্তা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কুইজ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ইয়ুথ ফর সায়েন্সের সমাপনী অনুষ্ঠান। এরপর একে একে বক্তব্য দেন সম্মানিত অতিথিরা। বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা আত্মপ্রকাশের ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। দিনটি উদ্‌যাপন করতে আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে কেক কাটেন। এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ‘ইয়ুথ ফর সায়েন্স’ শীর্ষক কৃষি ও প্রযুক্তিবিষয়ক এই প্রতিযোগিতায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিনটি বিভাগে (রচনা, ফটোগ্রাফি ও কুইজ) অংশ নেয়। ১১ অক্টোবর আয়োজনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে রচনা প্রতিযোগিতার সেরা ১০, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার সেরা ১০ এবং কুইজে অংশ নেওয়া সেরা ৭৪ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে তাদের মধ্য থেকে সেরাদের পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘সর্বত্রই বিজ্ঞান, সকাল থেকে আমরা যা যা করি, তার সবকিছুর মধ্যেই বিজ্ঞান রয়েছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্যের করা কাজ আমরা গ্রহণ করছি, কিন্তু আমাদের করা কাজ কতজন নিচ্ছে, সেটা ভাবতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে।’

বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ছয় বছর ধরে দেশের তরুণদের বিজ্ঞান সচেতন করতে কাজ করছে বিজ্ঞানচিন্তা। প্রতিটি শিশু-কিশোর-তরুণের অন্তরে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা। এই প্রতিভার বিকাশ হলে তরুণেরা বিশ্বমানের বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে পারবে।

রম্যলেখক ও উন্মাদ-এর সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, দেশের টেলিভিশন ও পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞানবিষয়ক অনুষ্ঠান ও নিবন্ধ কম। তরুণদের দায়িত্ব বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে এমন আয়োজন আরও বেশি প্রয়োজন।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, অনেক বড় সমস্যার ছোট সমাধান আছে, সেটি বিজ্ঞানীরা জানেন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদান অনেক। তরুণেরা আলোকিত হলে দেশ আলোকিত হবে।

খাদ্যশস্য উৎপাদনে জিন প্রকৌশলসহ আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন বলেন, ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তরুণদের জন্য কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। বিজ্ঞানের ইতিবাচক দিক কাজে লাগিয়ে তরুণেরা নিজেরাও উদ্যোক্তা হতে পারে।

বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা–এর সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ইয়ুথ ফর সায়েন্স ২০২২’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেক কাটেন অতিথিরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৫ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সাবেক কৃষিসচিব ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক আনোয়ার ফারুক বলেন, সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে খাওয়াতে হিমশিম খেতে হতো, সেখানে ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়ানো যাচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণে। দেশে জমি কম, চাহিদা বেশি। তাই কম জমিতে বেশি উৎপাদন করতে হবে।

দেশের তরুণেরা এখন বিশ্বমানের গবেষণা করছেন বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ এখন ঝুঁকির মুখে। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তির আরও আধুনিকায়ন করতে হবে।

বিজ্ঞান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে অযৌক্তিক ভয়ভীতি ঢোকানো হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুশতাক ইবনে আইয়ুব। তিনি বলেন, জীবনের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞানের ভূমিকা থাকে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে বিজ্ঞানকে গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করতে হবে।
 
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মৌসুমী মৌ। অনুষ্ঠান শেষে রচনা, ফটোগ্রাফি ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের বই, ব্যাগ, সনদ, বিজ্ঞান বাক্স, ক্রেস্ট, মেডেল, চেকসহ নানা পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।