হাসপাতালে এসে স্বামীকে মর্গে পেলেন স্ত্রী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত অক্সিজেন প্ল্যান্ট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় ফিলিংম্যান (শ্রমিক) হিসেবে কাজ করতেন সেলিম রিচিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি সেখানে কাজ করেন। তাঁর কাজ ছিল সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা। গতকাল শনিবার বিস্ফোরণের সময় তিনি প্ল্যান্টের ভেতরেই ছিলেন। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর সেলিমের মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে সেলিমের স্ত্রী লিলি মারাক ও শ্বশুর অজয় মারাক সেলিমের খোঁজে হাসপাতালে আসেন। মৃত্যুর খবর জানতেন না লিলি মারাক। আজ তা জানার পর হাসপাতালের এক কোনায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর পাশে দাঁড়ানো ছিলেন শ্বশুর অজয় মারাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে বিস্ফোরণের খবরটা একজন দেখেন। পরে সেলিমের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি। খোঁজ নিতে ফটিকছড়ির নারায়ণহাট থেকে সকালে হাসপাতালে এসেছেন। এসে জানতে পারেন সেলিম মারা গেছেন।

সেলিমের নিকটাত্মীয় সমীরণ মারাক প্রথম আলোকে জানান, সেলিমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের বয়স ১১ বছর ও মেয়ের বয়স ৮ বছর। লিলি মারাক ফটিকছড়ির চা–বাগানে কাজ করেন। ওখানেই থাকে দুই ছেলেমেয়ে।

গতকাল বিকেলে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিচ্ছিন্ন লোহার টুকরা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত।

বিস্ফোরণে নিহত ছয়জনের পরিচয়ই পাওয়া গেছে। সেলিম রিচিল ছাড়া বাকিরা হলেন— সীতাকুণ্ড উপজেলার জাহানাবাদ এলাকার শামসুল আলম (৬৫), ভাটিয়ারি বাংলাবাজার এলাকার মো. ফরিদ (৩৬), নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রতন নকরেট (৫১), নোয়াখালীর আবদুল কাদের, লক্ষ্মীপুরের মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

এ ছয়জনের মধ্যে শামসুল আলম ও সালাহউদ্দিন কারখানার কর্মী নন। ঘটনার সময় তাঁরা ছিলেন কারখানা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। বিস্ফোরণের পর লোহার পাত উড়ে এসে শামসুল ও সালাউদ্দিনের মাথায় লাগে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের স্বজনেরা। সে লোহার পাতের আঘাতে মৃত্যু হয় দুজনের।

বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের কারও পা থেঁতলে গেছে, কারও চোখে জখম হয়েছে, আবার কারও মাথায় আঘাত রয়েছে। গতকাল রাত থেকেই আহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা হাসপাতালে আসতে থাকেন। তাঁদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আহত ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অনেকেই বিলাপ করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিস্ফোরণের এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দোষারোপ করেছেন আহত ও নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা। শামসুল আলমের আত্মীয় মো. আলী নেওয়াজ ইমন প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ হয়েছে। সেদিন ৫০ জন মারা যান। তখন যদি তদারক করা হতো, হয়তো এ ঘটনা আর ঘটত না।

এর আগে গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন ৫০ জন। বিএম ডিপো থেকে সীমা অক্সিজেন কারখানার দূরত্ব পৌনে এক কিলোমিটার।