ইউএনএইচসিআর প্রধানকে তলব: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা সৃষ্টি করবেন না

স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আগ্রহী চারটি রোহিঙ্গা পরিবারের খাবার দেওয়া বন্ধ করে ইউএনএইচসিআর।

ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা গত সোমবার হঠাৎ করে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আগ্রহী চারটি রোহিঙ্গা পরিবারের ২৩ সদস্যকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আগেভাগে না জানিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এমন তৎপরতা সরকারকে চরম অসন্তুষ্ট করে তুলেছে।

এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম ঢাকায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাওকে তাঁর দপ্তরে তলব করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা যাতে বাধা সৃষ্টি না করে সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে ঢাকায় সংস্থার প্রধানকে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত পাইলট প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ভাসানচরে অবস্থানরত চারটি রোহিঙ্গা পরিবারের ২৩ সদস্য। দুই সপ্তাহ ধরে তাঁদের ভাসানচর থেকে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে রাখা হয়েছে। আগাম কিছু না জানিয়ে সোমবার ইউএনএইচসিআর তাঁদের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কিছু না জানিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা গত সোমবার রোহিঙ্গাদের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কেন তারা এটা করেছে, সে ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। অবশ্য মঙ্গলবার থেকে আবার ওই চারটি রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার দেওয়া শুরু করেছে ইউএনএইচসিআর।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ইউএনইএইচসিআরের প্রধান ইয়োহানেস ভন ডার ক্লকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব ডেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই পক্ষের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি মনে করে দিয়েছেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে ইউএনএইচসিআর। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে।

কূটনৈতিক সূত্রটি জানিয়েছে, ঘণ্টাখানেকের আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে চরম অসন্তোষের কথা ইউএনএইচসিআরের প্রধানকে জানানো হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে, ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় সহায়কশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এটাই তাদের কাজের পরিধির আওতায় পড়ে। এর ব্যত্যয় ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর যাতে বাধা না দেয়, সেটিই বাংলাদেশ আশা করে। ভবিষ্যতে যাতে রোহিঙ্গাদের হঠাৎ করে খাবার বন্ধ করে দেওয়ার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য তাঁকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।