শিল্পীর কাজই হচ্ছে নতুন কিছুর সন্ধান করা। সেই সন্ধান থমকে যায় অভ্যাসে আটকে গেলে। ছবির বিষয়, আঁকার পদ্ধতি, রঙের ব্যবহার সবকিছুই নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে গেলে তৈরি হয় নতুন শিল্পকর্ম। আর এই কাজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম করে চলেছেন ৮০ বছর বয়সেও। মনিরুল ইসলামের ৮০তম জন্মদিন উদ্যাপন অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব কথা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদ চত্বরে আয়োজিত জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী মনিরুল ইসলামকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন অনেক গুণীজন। আলোচনা পর্বের আগে বরেণ্য শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, বীরেন সোম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে লুভা নাহিদ চৌধুরী, সাংবাদিক নাসিমুন আরা হকসহ অনেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শিল্পীকে।
আয়োজনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবীর কথায় উঠে আসে চারুকলা অনুষদে (তৎকালীন ঢাকা আর্ট কলেজ) তাঁদের ভর্তি এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষকতার সময়কালের স্মৃতি। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই মনিরুল ইসলাম ছবিপাগল একজন আমুদে মানুষ। জলরঙের জন্য তিনি তখন থেকেই পরিচিত। তিনি স্পেনে যাওয়ার পর তাঁর ছাপচিত্র কতটা সমাদৃত হয়েছে, তা বোঝা যায় যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় শিল্পী মনিরুল ইসলামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করায়।
শিল্প সমালোচক ও স্থপতি শামসুল ওয়ারেস তুলে ধরেন তাঁদের দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ের স্মৃতি। তখন চাঁদপুর শহরে ছিল ‘ছায়াবাণী’ আর ‘চিত্রলেখা’ নামে দুটো সিনেমা হল। মনিরুল ইসলাম আর শামসুল ওয়ারেস দুজনের বাড়ি ছিল দুই সিনেমা হলের কাছে। রোজ সন্ধ্যায় তাঁরা সেখানে বাজানো গান শুনতেন। শামসুল ওয়ারেস বলেন, তখন ওই শহরে ‘সাধন’ নামে এক শিল্পী ছিলেন, যিনি সিনেমার ব্যানার আঁকতেন। মনির মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন তাঁর কাজ। এরপর তাঁর (শামসুল ওয়ারেস) বক্তব্যে উঠে আসে পরবর্তী সময়ে তাঁদের আবার যোগাযোগ এবং দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বের গল্প।
নিজের জন্মদিনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তাঁদের সময়ের শৈশবকালে জন্মদিন যে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি, সে স্মৃতি তুলে ধরেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জন্মদিন একটি নিয়ম করে উদ্যাপন করা দিবস। সুস্থ থাকলে আমার কাছে ৬০ আর ৮০–এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’ তাঁর জীবনে খুব খারাপ সময় কখনো আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, দুশ্চিন্তাই মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়। আর শিল্পীর মৃত্যু হয় অভ্যাসে আটকে গেলে। তাই রোজ তাড়না থাকে নতুন কিছু খোঁজার কারণ শিল্পী ছবি আঁকেন মূলত নিজের জন্যই। আর ছবি আঁকা কোনো দিন শেষ হয় না। এ সময় স্পেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেন মনিরুল ইসলাম।
শিল্পবোদ্ধা তাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের চিত্রকলার আজকের অবস্থানের জন্য বাঁক পরিবর্তনের অনেকের সঙ্গে অন্যতম একজন কারিগর মনিরুল ইসলাম।
গ্যালারি চিত্রক এবং সফিউদ্দিন শিল্পালয়ের সৌজন্যে আয়োজিত হয়েছে এ জন্মদিন অনুষ্ঠান। শিল্পী নাহিদা শারমিনের উপস্থাপনায় মুখর ছিল সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ আয়োজন। উত্তরীয় পরিয়ে শুভেচ্ছা জানানো এবং কেক কাটার পর হয় সংগীতানুষ্ঠান। জন্মদিনের আয়োজনে আরও উপস্থিত হয়েছিলেন গবেষক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্ক্ আলভী, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, সমাজকর্মী খুশী কবিরসহ অনেকে।
সংগীত পরিবেশন করেন বরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন।