পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা

এসকেএফ রেসপিকেয়ারের আয়োজনে ‘সুস্থ ফুসফুস, সুস্থ জীবন’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

সুস্থ জীবনের জন্য ফুসফুস সুস্থ রাখতে হবে। ধোঁয়া ও ধূমপান ফুসফুসের প্রধান শত্রু। ধূমপানের পরোক্ষ ঝুঁকিও রয়েছে। এর ঝুঁকি শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি। তাই ধোঁয়া বা ধূমপান থেকে বাঁচতে পারলেই ফুসফুসের অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ইনজিনিয়াস হেলথকেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রাশিদুল হাসান এক অনলাইন আলোচনায় এ কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ছিল ‘বিশ্ব ফুসফুস দিবস’। এ উপলক্ষে এসকেএফ রেসপিকেয়ারের আয়োজনে ‘সুস্থ ফুসফুস, সুস্থ জীবন’ শীর্ষক ওই অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

ডা. নাদিয়া নিতুলের উপস্থাপনায় অনলাইন আলোচনায় ডা. মো. রাশিদুল হাসান ফুসফুসকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে এবং এর রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, প্রাথমিক শনাক্তকরণ, ভ্যাকসিন, ব্যায়াম আর সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

শুরুতেই উপস্থাপক জানান, বিজ্ঞান বলে, যদি হৃৎপিণ্ড কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে, সেখান থেকে ফিরে আসা যায়; কিন্তু শ্বাস চলাচল যদি বন্ধ হয়ে যায়, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত। পৃথিবীতে বায়ুদূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, ধূমপান না করেও ধূমপায়ীর মতোই ক্ষতি হচ্ছে অনেকের। তাই মানুষ যদি সুস্থ জীবন চায় তাহলে সুস্থ ফুসফুস থাকতে হবে। আর ফুসফুস সুস্থ রাখতে চাই সুন্দর পরিবেশ।

ধূমপান ফুসফুসের কী ক্ষতি করে

অতিথির কাছে উপস্থাপক জানতে চান, ধূমপান ফুসফুসের ঠিক কতটা ক্ষতি করে? উত্তরে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, ‘সিগারেটের প্রতিটি টানে প্রায় সাত হাজার ক্ষতিকর পদার্থ ফুসফুসে ঢুকে যায়। এতে ইনফ্ল্যামেশন হয়, সিওপিডি, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস বাড়ে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। ধূমপান এমন একটি ক্ষতিকর বিষয়, যার শুধু প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ ঝুঁকিও রয়েছে। তিনি বলেন, ঝুঁকিটা শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। তাদের ফুসফুস পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। ফলে সামান্য ধোঁয়াতেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ঘরে বা পরিবারের মধ্যে ধূমপান একেবারেই নিষিদ্ধ করা উচিত।

কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে সাধারণত অনেকেই অবহেলা করেন। আসলে কী করা উচিত? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়। দীর্ঘদিন কাশি থাকলে বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ফুসফুসের পরীক্ষা করা দরকার। এ ক্ষেত্রে স্পাইরোমেট্রি বা লাং ফাংশন টেস্ট খুবই সাধারণ টেস্ট। এগুলো করালেই বোঝা যায় ফুসফুস ঠিক আছে কি না।

ফুসফুসকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে এবং এর রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, প্রাথমিক শনাক্তকরণ, ভ্যাকসিন, ব্যায়াম আর সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. রাশিদুল হাসান

ফুসফুস সুস্থ রাখতে টিকা রয়েছে। এটি নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। ফুসফুসের জন্য এর গুরুত্ব কতটা? এ প্রসঙ্গে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আর পাঁচ বছরে একবার নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নিলে অনেক জটিল সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। টিকা না নিলে সামান্য ঠান্ডা-কাশি থেকেও বড় ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ঝুঁকি মোকাবিলার উপায়

ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়। এ জন্য স্ক্রিনিং জরুরি, যদিও ব্যয়বহুল। তবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ, যেমন দীর্ঘদিনের ধূমপায়ীদের স্ক্রিনিং করানো উচিত।

এ পর্যায়ে উপস্থাপক জানতে চান, ফুসফুস সুস্থ রাখতে ব্যায়াম কতটা কার্যকর? উত্তরে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, হাঁটা, জগিং, দৌড়ানো—এসব আসলে ফুসফুসের ব্যায়াম। এগুলো ফুসফুসকে সচল রাখে। তাই প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা দরকার।

মাস্ক ব্যবহার শুধু কোভিডের জন্য দরকার, নাকি অন্য কারণেও? জানতে চাইলে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, অবশ্যই অন্য কারণেও। দূষণ, ধুলা, অ্যালার্জি—সবকিছু থেকে ফুসফুসকে সুরক্ষা দেয় মাস্ক। বাইরে বের হলে অভ্যাস হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

ফুসফুসের রোগীদের খাদ্যতালিকা নিয়ে দ্বিধান্বিত না থাকতে পরামর্শ দিয়ে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, ‘অনেকেই ভুল পরামর্শ দেন। আসলে ফুসফুসের রোগীদের জন্য হাই ক্যালরি খাবার দরকার। দিনে বারবার অল্প অল্প করে খেতে হবে। খাওয়ার পরপরই শোয়া যাবে না। যাঁদের নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি আছে, শুধু সেগুলো এড়িয়ে চলাই যথেষ্ট, সবকিছু বাদ দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।’

সবশেষে দর্শকদের উদ্দেশে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিরোধই ফুসফুস সুস্থ রাখার আসল চাবিকাঠি। ধূমপান বন্ধ করুন, ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ভ্যাকসিন নিন আর কাশি-শ্বাসকষ্টকে অবহেলা করবেন না। মনে রাখবেন, সুস্থ ফুসফুস মানেই সুস্থ জীবন।’