চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলা শুরু, প্রথম দিনেই লেখক–পাঠকদের উচ্ছ্বাস

বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনের স্টলে বই দেখছেন পাঠকেরাছবি: সৌরভ দাশ

তাওহীদুল ইসলাম ও ফায়েজুর রহমান দুই বন্ধু। বইমেলার খোলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর এ-স্টল ও-স্টলে আসা নতুন বই দেখছিল। দুজনের গায়ে জার্সি। একজনের কাঁধে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যাগ। স্কুলপড়ুয়া দুজনের ক্রিকেট খুব পছন্দ। তবে পড়তেও ভালোবাসে তারা। তাই অনুশীলন শেষে চলে এসেছে বইমেলায়। এসে পছন্দের বই খুঁজছে দুই বন্ধু।

এক বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামে শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। মেলার প্রথম দিন আজ বুধবার সন্ধ্যায় বইমেলা প্রাঙ্গণে এমন দৃশ্য দেখা যায়। চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে ২১ দিনের এই বইমেলা আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এবারের মেলায় ঢাকা-চট্টগ্রামের ১০৮টি প্রকাশনী অংশ নিচ্ছে।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া তাওহীদুল ইসলাম এবারই প্রথম বইমেলায় এসেছে। তার কথা, বইমেলা সবে শুরু হলো। এখন ঘুরে ঘুরে বই দেখবে। পরে কিনে নিয়ে যাবে। ফায়েজুর অবশ্য আগেও মেলায় এসেছিল। কিনেছিল বই। এবারও বই কেনার ইচ্ছা রয়েছে তার।

উদ্বোধনী দিনে পাঠকের উপস্থিতিও কম হয়নি। এবারের মেলা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। তবে প্রথম দিনে অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্টল সাজাতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে কর্মীদের। যাতে আজকালের মধ্যে পুরোদমে স্টল চালু করতে পারে।

স্টল সজ্জায় ব্যতিব্যস্ত অনিন্দ্য প্রকাশনীর বিপণন ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্টল সজ্জার কিছু উপকরণ সামগ্রী ঢাকা থেকে দেরিতে এসেছে। তাই শুরুর দিনেও কর্মীদের সঙ্গে তাঁদেরও কাজ করতে হচ্ছে। তবে প্রথম দিনে পাঠকের উপস্থিতিতে এবার বইমেলা নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি।

বিকেল পৌনে পাঁচটায় বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই মেলায় হাজির হতে থাকেন পাঠকেরা। তাঁদের কেউ কেউ নতুন আসা বইয়ের খোঁজ নিচ্ছিলেন। সংগ্রহ করেন বইয়ের তালিকাও।

মেলার প্রথম দিনে ছিল খুদে শিক্ষার্থীদের ভিড়
ছবি: সৌরভ দাশ

ইউপিএলের প্রকাশিত তালিকা নিয়ে দেখছিলেন তরুণ রিদুয়ানুল হক। তাঁর পছন্দ প্রবন্ধ ও ইতিহাসের বই। তিনি বলেন, প্রথম দিন তো আসলে বই কেনা হয়নি। শুরুর দিকে সব বইও পাওয়া যায় না। এখন তালিকা নিয়ে রাখলেন। আরেক দিন এসে সংগ্রহ করবেন।

প্রাণের বইমেলায় বই বেচাকেনার চেয়ে বড় অনুষঙ্গ আড্ডা। স্টলগুলোর সামনে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের যেমন আড্ডা চলে, তেমনি পাঠকেরাও গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন। এই রকম এক আড্ডা বসেছিল প্রথমা প্রকাশনের সামনে। আড্ডার মধ্যমণি লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী, প্রকাশক শামসুদ্দিন শিশির।

এবারের বইমেলায় প্র প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাইনুল এইচ সিরাজীর কিশোর থ্রিলার বাসার স্যারের বাকি রহস্য। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বইমেলা তাঁদের জন্য স্বস্তির। কেননা, আগে অপেক্ষায় থাকতেন কখন ঢাকার বইমেলা শুরু হবে। কখন সেখানে যাবেন, সেটি নিয়ে অস্থিরতা কাজ করত। আবার সেখানে যেতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। এখন আর তা নেই।

বইমেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার
ছবি: সৌরভ দাশ

এবারের মেলার স্টল ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রকাশক শামসুদ্দিন শিশির বলেন, এখনো সব স্টল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তবু মেলা নিয়ে মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কাগজের দাম বেড়েছে। বই প্রকাশ করতে হচ্ছে হিসাব করে। তারপরও প্রকাশকেরা চেষ্টা করছেন ভালো বই প্রকাশ করতে।

প্রথমা প্রকাশনের কর্মী ইব্রাহিম তানভীর বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বইমেলা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল কম। এবার তা নেই। তাই এবারের মেলায় পাঠকের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য প্রথম দিন বিক্রি হয়েছে কম।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণের জন্য একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। একাত্তরে যে চেতনার ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুরো জাতি এক হয়ে লড়েছিল, সে চেতনার ধারা আজ দুর্বল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর অকালপ্রয়াণের পর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে জনগণ বিশেষ করে শিশুদের মগজধোলাই করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বইমেলার মাধ্যমে মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ হবে।