সংবর্ধনায় জ্বলে উঠল শিখা

শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজশাহী নগরের শহীদ জিয়া শিশুপার্কে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

‘মাত্র দুই দিনের সিদ্ধান্তে মা-বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার ভাগ্যে কী হবে, কী থাকবে কিছুই বুঝিনি তখন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যৌতুকের জন্য জেদ ধরলেন। আমার রিকশাচালক বাবা সেই টাকা জোগাড় করতে পারলেন না। এক মাসের মাথায় সংসারই ভেঙে গেল। ইচ্ছা থাকলে বোধ হয় অনেক কিছুই করা যায়। তাই হার মানিনি, বাবার বাড়িতে ফিরে এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। জিপিএ-৫ পেলাম। আমার কথা—আগামী দিনের যেকোনো লড়াইয়ে আমরা হারব না।’

এভাবেই গতকাল সোমবার রাজশাহীতে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলল শিখা খাতুন। শিখা বাঘা উপজেলার মেয়ে। সে এবার সেখানকার মণিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে যখন কথাগুলো বলছিল, তখন মঞ্চের পাশে দাঁড়ানো তার বাবা মো. লালন আলী কাঁদছিলেন।

রাজশাহীর শহীদ জিয়া শিশু পার্কে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এর আগে মঞ্চের পাশে থাকা চারটি বুথ থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সারিবদ্ধ হয়ে সংগ্রহ করেছে সকালের নাশতা, ক্রেস্ট ও সনদ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।

কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ। তিনি বলেন, আজকের এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে আরও বেশি কৃতিত্ব দেখাবে। তাঁরা নিজেরা সফল হবে, দেশকে সফল করবে। তাঁরা বাংলাদেশকে পথ দেখাবে।

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক মো. আবদুর রশীদ সরদার বলেন, অনেকেই ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, সচিবসহ বড় বড় কর্মকর্তা হবে। কিন্তু একজন ভালো মানুষ না হলে এগুলো কিছুই হওয়ার দরকার নেই।

রাজশাহী সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আল মামুন মো. আজাদুল বারী বলেন, এসব শিক্ষার্থী আগামী দিনে দেশের জন্য কাজ করলে আজকের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সার্থক হবে।

গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের শিক্ষক শুভ্রা রায় বলেন, ‘এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা তোমাদের ধরে রাখতে হবে। মা-বাবা ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলতে হবে। তাহলেই এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

মঞ্চে কিশোর আলো নিয়ে ওঠেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি কৃতী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন ও সঠিক উত্তরদাতা শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসেবে এ ম্যাগাজিন দেন। তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দুই হাত তুলে মাদক, মিথ্যা ও না বুঝে মুখস্থকে ‘না’ বলে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তথাপি আজাদ।

অনুষ্ঠানে বেহালার সুর তুলে শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইকবাল মতিন। তাঁর সঙ্গে বেহালা বাজায় দুই কৃতী শিক্ষার্থী লাবিবা জাহান ও সালওয়া জুমানা ওমর, গান পরিবেশন করেন শান্তনা আক্তার ও সুজন চক্রবর্তী। নৃত্য পরিবেশন করে তিন বোন শিশুশিল্পী অপ্সরা, অধরা ও অঝরা।

সংবর্ধনা পেয়ে আনন্দিত রুপা ইসলাম বলে, সে গোদাগাড়ী থেকে এসেছে। অনেক মানুষের কথা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

অনুষ্ঠানস্থলে আড্ডা, ছবি তোলা ও বিভিন্ন রাইডে ওঠায় মেতেছিল শিক্ষার্থীরা। একসঙ্গে ছবি তুলতে থাকা রাজশাহী চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আহমেদ, মো. অলিউলসহ আট-দশজন জানায়, এমন একটি অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়ে তারা খুব আনন্দিত। এটা তাদের সারা জীবন মনে থাকবে।

মেয়ে তানিস তাসসীনকে নিয়ে চারঘাট উপজেলা থেকে এসেছেন মা পারুল খাতুন। তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজনে এসে তাঁরও ভালো লাগছে। এখানে এসে বাচ্চারা আরও ভালো কিছু করার উৎসাহ পাবে।

দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।