চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ের দরজি পাড়ায় নিজের একটি একতলা ভবন আছে বিধবা লায়লা বেগমের। ভবনে ফ্ল্যাট আছে মাত্র একটি। সেই ফ্ল্যাটে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি। ভাইদের আর্থিক সহায়তায় সংসার খরচ চালান। তাঁর এই বাড়ির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বার্ষিক গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ২০ হাজার টাকা। অথচ এর আগে কর দিতেন মাত্র ২ হাজার ৪০ টাকা। আপিলের পর নতুন করে ৩ হাজার ৭৪০ টাকা গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। এতেও সন্তুষ্টি নন তিনি।
বুধবার চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গৃহকর নিয়ে আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ আপিল বোর্ডের সদস্যরা। শুনানি শেষে করদাতাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা।
শুনানি শেষে কথা হয় লায়লা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোগে ভুগে স্বামী মারা গেছেন। বাবা একটি বাড়ি করে দিয়েছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আরেক মেয়ে কলেজে আর ছেলে বিদ্যালয়ে পড়ে। তাঁর নিজস্ব কোনো আয় নেই। ভাইদের আর্থিক সহায়তায় সংসার চালান। এখন শুনানির পর যে গৃহকর নির্ধারণ করেছে তা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না। শুনানিতে সেটা বলার চেষ্টা করেছেন। অনুরোধও করেছেন। কিন্তু কেউ শুনেননি।
বুধবার চান্দগাঁও, পূর্ব ষোলোশহর ও মোহরা ওয়ার্ডের আপিল শুনানি হয়। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুনানি চলে। এই সময়ে ১৪৭টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অধিকাংশই শুনানির পরে নির্ধারণ করা গৃহকর নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অন্তত তিনজন তাঁদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা বলেন, গৃহকর নিয়ে আন্দোলনের সুফল পেয়েছেন তাঁরা। আন্দোলন না হলে গৃহকর এভাবে কমানো হতো কি না সন্দেহ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৭ সালে স্থাপনার ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে গৃহকর ৩ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরে তা স্থগিত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুরোধে তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কর আদায় কার্যক্রম শুরু করে সিটি করপোরেশন।
শুনানিতে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুল আলমের আপিল নিষ্পত্তি হয়। দোতলা ভবনের জন্য আগে ৫ হাজার ১০০ টাকা গৃহকর দিতেন বলে জানান তিনি। এখন ১০ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দোতলা ভবনে ফ্ল্যাট আছে দুটি। সেখানে তাঁদের পরিবার থাকে। কোনো ভাড়া নেই। তাই এখন যে গৃহকর ধরা হয়েছে সেটাও বেশি মনে হচ্ছে তাঁর কাছে।
তবে চান্দগাঁওয়ের ফরিদার পাড়ার বাসিন্দা সৌরভ বড়ুয়া বলেন, তাঁদের আধা পাকা তিনটি ঘর রয়েছে। সেগুলোর জন্য ৮৪২ টাকা গৃহকর দিতেন। কিন্তু নতুন করে সেটা ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনকে আর কর দেবেন না। পরে আপিলের সুযোগ দেওয়া হলে তাতে আবেদন করেন। এখন আড়াই হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এখন কর সহনীয় পর্যায়ে এসেছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।
নগরের হাজীর পুল এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক প্রথম আলোকে বলেন, আপিল শুনানির পর গৃহকর অনেক কমানো হয়েছে। গৃহকর নিয়ে আন্দোলন না হলে সিটি করপোরেশন এভাবে কর কমাতেন বলে মনে হয় না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত মো. বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, করদাতাদের মতামতের ভিত্তিতেই সহনীয় পর্যায়ে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় সবাই খুশি। যদিও সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।