ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি এখনো

ছবি: ওয়েবসাইট

গ্যাসের অপচয় কমানো ও আবাসিক গ্রাহকদের অতিরিক্ত ব্যয় থেকে রক্ষা করতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছিল কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। দেড় বছর পার হলেও প্রকল্পের কোনো কাজ শুরু হয়নি। এমনকি ঠিকাদারও নিয়োগ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কবে মিটার বসবে, তা-ও জানাতে পারছে না সংস্থাটি।

এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের এ প্রকল্পের অনুমোদন হয় ২০২১ সালের ১৮ মে। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটি মিটারে খরচ পড়ছে প্রায় ২৪ হাজার টাকা।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রিপেইড মিটার নিতে আবেদন নেওয়া শুরু করে কেজিডিসিএল। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার নিতে আবেদন করেছেন।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জিয়াউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছোট পরিবার। বর্তমানে দুই চুলার জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা গ্যাসের বিল দিতে হয়। কিন্তু এত টাকার গ্যাস তাঁরা ব্যবহার করেন না। কিন্তু প্রিপেইড মিটার নিতে পারলে গ্যাস ব্যবহারের খরচ কমে যেত। যতটুকু ব্যবহার, ততটুকুই খরচ হতো। এ কারণে চলতি বছরের মার্চে তিনি প্রিপেইড মিটারের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখনো কেজিডিসিএল থেকে তাঁকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে জটিলতার কারণে প্রকল্পের কোনো কাজই শুরু হয়নি। ফলে সময় আরেক দফা বাড়ানোর চিন্তা করছে সংস্থাটি।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর গ্যাস ব্যবহারকারী সব গ্রাহককে দ্রুত প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ ক্ষেত্রে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে এই কাজ করতে বলা হয়। মূলত আবাসিক খাতে গ্যাসের অপচয় রোধে এ সুপারিশ করা হয়েছিল। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তোড়জোড়ের পরও কেজিডিসিএল প্রকল্পের কাজে তেমন অগ্রগতি করতে পারেনি।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত বছর। কিন্তু পছন্দের কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। পরে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে চলতি বছরের মে মাসে ডিটিসিএল নামের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। সংস্থাটি মিটারের ব্যবহার ও সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কারিগরি পরামর্শ দেবে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা-ও তদারক করবে।

প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শুরু না হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদের কার্যালয়ে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে কোম্পানি সচিব ফিরোজ খানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে তিনিও কথা বলেননি।

জানা গেছে, ২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডকে পুনর্বিন্যাস করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকা হলো চট্টগ্রাম নগর, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই।

এসব এলাকায় মোট গ্রাহক-সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। গৃহস্থালি বা আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ওই প্রকল্প নেওয়া হয়।

প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে নানা ধরনের সুবিধা পাবেন গ্রাহকেরা। এর আগে জাইকার অর্থায়নে ২০১৫ সালে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর আর প্রিপেইড মিটার বসানো হয়নি।