ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে নগরের এসব এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। একপর্যায়ে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে যায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট।
নগরের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-গুদামে পানি ঢোকে। এতে দোকান ও গুদামের পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির কথা ভেবে তাঁরা উদ্বিগ্ন।
সাধারণত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নগরের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যায়। তখন তিন থেকে চার দিন এই ভোগান্তি থাকে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। যার প্রভাব নগরের নিচু এলাকাগুলোতে পড়ে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নগরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, পাথরঘাটা আশরাফ আলী সড়ক, বাকলিয়া, ডিসি রোড, বাড়ইপাড়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, নিমতলা, মাইজপাড়া, হালিশহরের পুরোনো ডাকঘর, আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকা তলিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১১টা থেকে জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়তে থাকে। হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে যায়। দিবাগত রাত দুইটার পর পানি নামতে শুরু করে।
পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ভুক্তভোগীদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। অনেক বাসিন্দা ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়।
চাক্তাই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, এবার জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক বেশি ছিল। ঘরের ভেতরেও কোমরসমান পানি জমেছিল। এতে ঘরের অনেক জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। জোয়ারের পানির কারণে রাতে পরিবারের সদস্যদের কেউ ঘুমাতে পারেনি।
চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজারে অন্তত ৫০টি পাইকারি দোকান রয়েছে। তার মধ্যে একটি মসলার দোকান মেসার্স হাজী মো. ইছহাক সওদাগর।
দোকানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেকান্দর প্রথম আলোকে বলেন, এবারের মতো পানি গত চার-পাঁচ বছরে দেখেননি তিনি। পানিতে দোকানের ভেতরে থাকা মসলা ভিজে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে বাজারের অন্য দোকানগুলোর।
মোহাম্মদ সেকান্দর বলেন, ২০১৭ সালে জোয়ারের পানিতে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। পরে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে দোকানের সামনে দুই ফুট উঁচু বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবলেও দোকান ডুবত না। তবে এবার আর জোয়ারের পানি ঠেকানো যায়নি। পানিতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে কিছুটা সময় লাগবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ গতকাল সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানে। আর মূল কেন্দ্র উপকূলে আঘাত হানে রাত ৯টায়। বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে ইতিমধ্যে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে সিত্রাং।