তথ্য পরিকাঠামো গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নতুন হাতিয়ার

‘সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম নিপীড়নে ২৯ প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো ঘোষণা ও প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের’ প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নছবি: সাজিদ হোসেন

সম্প্রতি জারি করা ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’বিষয়ক প্রজ্ঞাপন সরকারের দুরভিসন্ধি এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নতুন হাতিয়ার বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারার দোহাই দিয়ে জারি করা তথ্য পরিকাঠামো পরিপত্র প্রতারণামূলক। সাংবাদিক সমাজ এটা প্রত্যাখ্যান করছে। ১৫ ধারায় পুরো প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণার সুযোগ নেই। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ‘কালাকানুন’ বাতিল করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। ‘সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম নিপীড়নে ২৯ প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা ও প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের’ প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

সাংবাদিক নেতারা বলছেন, দুর্নীতি চাপা দেওয়ার জন্য তথ্য পরিকাঠামো জারি করা হয়েছে। কোনো পরিপত্র ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে না। সমাবেশে বক্তারা বলেন, নানা কালাকানুন করে অতীতেও সাংবাদিকদের কলম দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির শীর্ষে, সেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য ধামাচাপা দিতেই এই পরিকাঠামো জারি করা হয়েছে।

সমাবেশে সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, সরকার মন–মগজে বিশ্বাস করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। কারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। এই বিশ্বাসকে ভর করেই সরকার চলছে।

শওকত মাহমুদ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় বহু সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অনেক সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছিল। এগুলো করা হয়েছিল যেন একটি সাজানো নির্বাচন করতে গেলে তার কোনো খবর সংবাদপত্রে না আসে। তিনি বলেন, পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জারি করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, ওই নির্বাচন নিয়ে যাতে কেউ কোনো কথা লিখতে না পারে, বলতে না পারে, মধ্যরাতেই যাতে ভোট শেষ করা যায়। এই দুটি নির্বাচনে সত্য প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিক দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

শওকত মাহমুদ মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে আরেক দফা প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করার জন্য এবং সে নির্বাচনের কোনো খবর যাতে প্রচার না হয়, সে জন্য পরিকাঠামোতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। তবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। যারা এই কালো আইন করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। তা না হলে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

কোনো পরিপত্র ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে না বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী। তিনি বলেন, সরকার বলেছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো সাংবাদিক গ্রেপ্তার হবে না। কিন্তু সাংবাদিকেরাই সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।

প্রেস কাউন্সিল খবরদারি শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন রুহুল আমিন গাজী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা বলছে, যার খুশি ডিক্লারেশন বাতিল করবে। প্রেস কাউন্সিল সংবাদপত্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য প্রেস কাউন্সিল কাজ করে না।’

বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের বর্তমান মহাসচিব নুরুল আমিন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাংবাদিকেরা। মিছিলটি রাজধানীর তোপখানা রোড থেকে কদম ফোয়ারা ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।