সম্প্রতি আসবাবকে সরকারিভাবে ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন ঘোষণা এ খাতের সমৃদ্ধিতে কতটা ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
ইয়ামিন রিখু: এটি নিঃসন্দেহে দেশের আসবাব খাতের জন্য একটি বড় মাইলফলক। সরকার যখন কোনো পণ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়, তখন সেটির প্রতি মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে এই ঘোষণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া এই খাতে বিনিয়োগ বাড়বে ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে। তবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে নীতিসহায়তা দিতে হবে, যেমনটি দেওয়া হচ্ছে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে। উৎপাদিত আসবাবপত্রের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। তবু রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের এবং মানসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র উৎপাদন করছে। দেশের মানুষ এখন বিদেশি ফার্নিচারের পরিবর্তে দেশীয় ফার্নিচার বেছে নিচ্ছে। দেশে তৈরি ফার্নিচার পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে।
আসবাবকে বর্ষপণ্য হিসেবে উদ্যাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু কর্মপন্থা হাতে নিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নে নাভানা কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বা সহযোগিতা করছে?
ইয়ামিন রিখু: নাভানা বরাবরই দেশের আসবাব খাতের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। নাভানা মূলত আসবাব রপ্তানিকারকদের সংগঠন ‘ফার্নিচার এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র সঙ্গে কাজ করে। এই অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় আমরা ‘বর্ষপণ্য উদ্যাপন’ কার্যক্রমে সমর্থন দিচ্ছি। মূলত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা সেমিনার আয়োজন, নীতিগত সহায়তা, মেলার আয়োজন, বাজার গবেষণা ও দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা করে। পাশাপাশি বিদেশি চেম্বার ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পারস্পরিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।
প্রায় ২৩ বছরের পথচলা নাভানা ফার্নিচারের। শুরুটা কেমন ছিল? যে লক্ষ্যে যাত্রা শুরু, তার কতটুকু অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন?
ইয়ামিন রিখু: নাভানা ফার্নিচারের যাত্রা ২০০২ সালে। আমাদের লক্ষ্য ছিল গুণগত মানের আসবাব সরবরাহ এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জন। নাভানা গ্রুপের অংশ হিসেবে ও রিয়েল এস্টেট খাতে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা গ্রাহকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার দায়িত্ব অনুভব করেছি। এই ধারণা থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে আমরা গ্রাহকদের বাসাবাড়ি সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য এবং অফিসে মনোরম পরিবেশ তৈরির জন্য আসবাব সরবরাহে মনোযোগ দিই। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত হয়েছে। এখন আমরা আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাত ছাড়াও শিল্প, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের জন্যও আসবাব সরবরাহ করছি। এ ছাড়া আমদানিনির্ভর আসবাবের চাহিদা কমিয়ে দেশের তৈরি আসবাব ব্যবহারের দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। আর এই যাত্রায় আমরা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি বলে মনে করি।
বিশ্বজুড়ে অন্দরসাজে একধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। নাভানা সেই পরিবর্তনের ধারা কতটা গ্রহণ করেছে এবং আসবাবের নকশার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিচ্ছে?
ইয়ামিন রিখু: বিশ্বজুড়ে অন্দরসাজে পরিবর্তনের ধারা নাভানা সব সময়ই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। আমরা নতুন নকশা ও উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিই। আমাদের লক্ষ্য এমন আসবাব সরবরাহ করা, যা আধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ ও ন্যায্যমূল্যে গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত হয়। আমরা সব সময়ই সাম্প্রতিক ট্রেন্ড ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করি। গ্রাহকদের মতামতকে নকশার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিই এবং পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকেও উদ্ভাবনী ধারণা যোগ করি। বাণিজ্য মেলাগুলোয় আমরা অত্যাধুনিক ও বহুমুখী নকশার আসবাব প্রদর্শন করি। আমাদের কয়েকটি নকশা বাজারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এবং এগুলো আমাদের নিজস্ব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকেই তৈরি করা হয়েছে।
দেশের আসবাব খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ইয়ামিন রিখু: সরকারি পর্যায়ে প্রণোদনা ও কর সুবিধা বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন করা প্রয়োজন। সরকারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে পারে স্থায়ী কর্মী–দক্ষতা উন্নয়নকেন্দ্র স্থাপন করা। কেন্দ্রটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে গড়ে তোলা উচিত, যা কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। একটি আধুনিক ফার্নিচার টেস্টিং ও ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন, যা রপ্তানি সমর্থনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই ফার্নিচার টেস্টিং ও ল্যাব সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি পেতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি সরকার আসবাবশিল্প স্থাপনের জন্য বিশেষ একটি রপ্তানি অঞ্চল বরাদ্দ করতে পারে, যা মূলত রপ্তানি খাতের জন্য ব্যবহৃত হবে। এই উদ্যোগগুলো দেশের আসবাবশিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
এবারের বাণিজ্য মেলায় নাভানা ফার্নিচার নতুন কী কী পণ্য নিয়ে এসেছে?
ইয়ামিন রিখু: আমরা এ বছর বেশ কিছু ইনোভেটিভ পণ্য এনেছি, যেমন স্মার্ট ফার্নিচার, মডুলার ইউনিট ও পরিবেশবান্ধব আসবাব। এগুলো আধুনিক ডিজাইন ও টেকসই উপকরণ দিয়ে তৈরি। এবারের মেলায় নাভানা বিশেষভাবে কিছু নতুন স্মার্টফিট ইউনিট, বেন্ড ডিজাইনভিত্তিক চেয়ার ও খাট প্রদর্শন করেছে। মেলায় প্রদর্শিত বেশির ভাগ পণ্য সম্পূর্ণ নতুন এবং মেলাতেই প্রথমবারের মতো উন্মোচন করা হয়েছে।
নাভানার কোন ধরনের আসবাবের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও সাড়া বেশি? মেলা উপলক্ষে ক্রেতাদের কী কী অফার বা সুবিধা দিচ্ছেন?
ইয়ামিন রিখু: আমাদের সোফা, ডাইনিং সেট ও খাটের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। মেলায় বিশেষ ছাড়, ইএমআই সুবিধা এবং ফ্রি ডেলিভারি অফার করছি। ফলে আমরা এবারের মেলায় বিগত দিনগুলো থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি।
এবারের বাণিজ্য মেলায় ৩৬২টি স্টল রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিড়ে মানুষ কী কী বৈশিষ্ট্যের কারণে নাভানার আসবাব পছন্দ করবেন?
ইয়ামিন রিখু: আমাদের ডিজাইনের বৈচিত্র্য, গুণগত মান ও বিক্রয়োত্তর সেবাই আমাদের আলাদা করে। এ ছাড়া আমরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড সল্যুশন দিচ্ছি। এবারের বাণিজ্য মেলায় নাভানার স্টল সম্পূর্ণ অন্য রকম এবং অন্যদের থেকে ভিন্ন। মেলার ভেতরে হাঁটলে আমাদের স্টল সহজেই চেনা যাবে এর ব্যতিক্রমী নকশার জন্য।
রপ্তানি বাজার ও নাভানা ফার্নিচারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাই।
ইয়ামিন রিখু: আমাদের লক্ষ্য নাভানাকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রসারিত করা। ভবিষ্যতে নতুন বাজার খুঁজে বের করা ও বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হওয়া। আমরা ইতিমধ্যে সীমিত পরিসরে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এখন এটি আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি।
সঠিক আসবাব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছে নাভানা ফার্নিচার কী পরামর্শ ও বার্তা পৌঁছাতে চায়?
ইয়ামিন রিখু: আমরা ক্রেতাদের বলব, প্রয়োজন ও স্থান অনুযায়ী আসবাব নির্বাচন করুন। গুণগত মান ও টেকসই উপকরণ নিশ্চিত করুন। নাভানা সব সময় আধুনিক ডিজাইন ও মানসম্মত আসবাব সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইয়ামিন রিখু: আপনাকেও ধন্যবাদ।