শ্রম আইনের সংস্কারের স্বার্থে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার তাগিদ

বাংলাদেশে শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ জন্য সরকার ও অংশীজনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

আইএলওর পথনকশা অনুযায়ী শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পেশ করা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির খসড়া পর্যবেক্ষণে এমন মতামত উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর চলতি ৩৫০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আইএলওর পথনকশা অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তুলে ধরবে। জেনেভায় অনুষ্ঠেয় ওই আলোচনায় বিশ্লেষণ করা হবে শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি।

৮ মার্চ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই পর্যবেক্ষণে আইএলও বলেছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আইএলওর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে জোরালো অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।

আইএলওর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অধিবেশনটি শুরু হয়েছে ৪ মার্চ। চলবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত। চলতি অধিবেশনে মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ গত ২৯ জানুয়ারি আইএলওর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও এর আগে শ্রম আইনে যে সংশোধনটি আনা হয়েছিল, তা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিলটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি। তাই বিলটি পাস হয়নি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে শ্রম আইনের বিলটি পাস হবে বলে সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

অবশ্য গত ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৫ মার্চ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শেষ হয়েছে। বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রস্তাবিত শ্রম আইনের বিল উত্থাপিত হয়নি।

সরকারের দেওয়া পথনকশায় আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারগুলো জড়িত। এর সঙ্গে আইন বাস্তবায়ন ছাড়াও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। এতে প্রধান চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

আইএলও বাংলাদেশের উপস্থাপিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ৮ মার্চ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই পর্যবেক্ষণে আইএলও বলেছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আইএলওর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে জোরালো অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সরকার ও অংশীজনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে আইএলওর কারিগরি সহায়তা এবং মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

আইএলওর কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বলেছে, আইএলওসহ সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করে। সেই অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধনের বিলটি শুরুতে মন্ত্রিসভা ও পরে বিগত সরকারের সংসদের শেষ অধিবেশনের মাধ্যমে পাস করানো হয়। এরপর বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে রাষ্ট্রপতি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিলটি ফেরত পাঠান।

বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিবেদনে, সরকার শ্রম খাতের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণ, অনলাইনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, আরও শ্রম আদালত গঠন, হেল্পলাইন স্থাপন, পুরোনো মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অগ্রগতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এরপর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার শ্রম আইন সংশোধনপ্রক্রিয়া শুরু করে। রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ও আইন পর্যালোচনা কমিটির আলোচনার পর গত ২৩ জানুয়ারি শ্রম আইনের সংশোধনে আরও সংস্কার এনে চূড়ান্ত করা হয়। চূড়ান্ত সংশোধনটি জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদের (এনটিসিসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি এনটিসিসি অনুমোদন দিলে তা মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বলেছে, শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তাসহ শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে ২০২১-২০২৬ সালের পথনকশা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। এ খাতের প্রশাসনিক, আইনি ও নীতিগত সংস্কারগুলো নিয়ে সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রতিবেদন ইতিমধ্যে সরকার জমা দিয়েছে। এ সংস্কার অগ্রগতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মজুরি, দক্ষতার উন্নয়ন এবং শ্রমকল্যাণ। সম্প্রতি আইএলওর পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে তাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সরকারের সময়মতো গৃহীত এসব উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে।

সরকারের দেওয়া পথনকশায় আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারগুলো জড়িত। এর সঙ্গে আইন বাস্তবায়ন ছাড়াও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। এতে প্রধান চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো শ্রম আইনের সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শন ও আইন প্রয়োগ এবং অন্যায্য শ্রমচর্চা, শ্রমিকের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ট্রেন ইউনিয়নের বিষয়ে বৈষম্য।

আইএলও চাইছে যে শিল্পকারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের নিবন্ধনের হার ১০ শতাংশ করা হোক। তবে এ ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবসম্মত হিসেবে মনে করে সরকার। ট্রেন ইউনিয়ন গঠন, শ্রম পরিদর্শন, সমাবেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে আইএলও এখনো সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তবে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সংস্কারে জোর দিয়ে আসছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ শ্রম আইন সংস্কারে যেসব প্রতিশ্রুতি করেছে, তার সবগুলোর অগ্রগতি আগামী ৩৫২তম অধিবেশনে দেখতে চায় আইএলও।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আইএলওর এবারের শুনানিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সরকারের প্রতিশ্রুত পথনকশার অনেক কিছুই এখনো পালন করতে পারেনি। এ বিষয়গুলো আইএলওকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধনের সবকিছুই করবে বাংলাদেশ, সেই প্রতিশ্রুতিতে এখনো অটল রয়েছে।

বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিবেদনে, সরকার শ্রম খাতের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণ, অনলাইনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, আরও শ্রম আদালত গঠন, হেল্পলাইন স্থাপন, পুরোনো মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অগ্রগতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে।