বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত লবণাক্ততা একটি বড় সমস্যা। এতে কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন কমে যায়। তবে উড়িধানের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণুতা ও ফলন বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের একটি গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। ‘ধানের লবণ-সহনশীলতা বৃদ্ধিতে উড়িধান সংশ্লিষ্ট জিন ও অণুজীবের প্রয়োগ (জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উড়িধানের ব্যবহারিক প্রয়োগ)’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট।
বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে গবেষক দলের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। গবেষক দলের নেতৃত্বে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলাম। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী বছরের এপ্রিলে৷
অনুষ্ঠানে চলমান গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে অধ্যাপক জেবা ইসলাম বলেন, ‘উড়িধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি তার আশপাশের পরিবেশ থেকে লবণ শোষণ করে পানি ও মাটির লবণের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এই গুণ ব্যবহার করে আমরা উপকূলীয় অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারি, যা কৃষকদের সব ধরনের শস্য উৎপাদনে সহায়ক।’
অধ্যাপক জেবা ইসলাম আরও বলেন, উড়িধানের বিশেষায়িত মূল থেকে গবেষক দল এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে, যা সাধারণ অণুজীবের চেয়ে দ্বিগুণ লবণাক্ততা লবণ সহ্য করতে সক্ষম। এ–সম্পর্কিত তিনটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এসব ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক থেকে বায়োফার্টিলাইজার (সার) তৈরি করে একই সঙ্গে ধানগাছের লবণ-সহিষ্ণুতা এবং ফলন বাড়ানো সম্ভব।
উড়িধান উপকূলীয় এলাকায় ধানি ঘাস নামে পরিচিত৷ এই ধানের তেমন ফলন হয় না, খুবই কমসংখ্যক দানা পাওয়া যায়। কিন্তু উড়ি অন্যান্য চাষকৃত ধানের জাতের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান বলেন, এই প্রকল্পের তিনটি মূল লক্ষ্য হলো উড়িধানের জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ ধানের মধ্যে এনে লবণ সহনশীল ধানের উদ্ভাবন, উড়ি ধানের মধ্যে বসবাসরত অণুজীবের প্রয়োগের মাধ্যমে (রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে) ধানের ফলন বাড়ানো এবং শুষ্ক মৌসুমে যখন লবণাক্ততা বেড়ে যায়, তখন উড়িধান দ্বারা শোধনকৃত পানি ব্যবহার করে সাধারণ ধানের ফলন বাড়ানো৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রমধর্মী এ গবেষণার জন্য গবেষক দলকে ধন্যবাদ দিই। সমাজে যে গবেষণার প্রভাব থাকে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘শুরু থেকে এই প্রকল্পের সঙ্গে আমি যুক্ত আছি। যেহেতু বাংলাদেশে লবণাক্ততার মধ্যেই আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে, সে ক্ষেত্রে এই উদ্ভাবনটা আমাদের অনেক কাজে লাগবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের উদ্দেশ্যও বাস্তবায়ন হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মতিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিভাগের অধ্যাপক ও চলমান প্রকল্পের উপপরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম।