সবাই তাঁকে ভুল বুঝেছে সব সময়

অক্সফামের রেমন্ড করনওয়ারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ডা. জাফরুল্লাহ কেমন মানুষ? তিনি বলেছিলেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল বুঝেছে তাঁকে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ফাইল ছবি

চলে যাওয়ার পর আমাদের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। সংবাদমাধ্যম যথেষ্ট যত্নের সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর খবর পরিবেশন করেছে। নানাজনের শোকবার্তা, স্মৃতিচারণা, সামাজিক মাধ্যমে অশ্রুপাত—সবই চলছে, যেমন চলে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অর্জনের বয়ানে নিজ নিজ সম্পৃক্ততার নির্ঘণ্ট দিতেও অনেকে কসুর করছেন না। আমরা সবাই যেন তাঁর অর্জনের সক্রিয় অংশীদার।

জাফর ভাই অবশ্য এমনটিই চাইতেন, যেন তাঁর স্বপ্ন সবার স্বপ্ন হয়, তাঁর সব অর্জন দেশের অর্জন বলে স্বীকৃত হয়। তবে সামনে–পেছনে যাঁরা তাঁর পথে প্রতিদিন কাঁটা বিছিয়ে তাঁর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছেন, তাঁদের কথা মনে রাখতে হবে। উল্লেখ করতে হবে কেন আমরা তাঁকে পদে পদে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছি।

অনেকেই মাঝপথে তাঁকে ফেলে চলে গেছেন দেশবিরোধী শিবিরে। স্বার্থান্বেষীদের গণবিরোধী অ্যাজেন্ডা তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে খতম হবে না, বরং বেগবান হবে।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের ইয়ত্তা নেই

ভারতের আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে তিনি নাকি কারও কথা শুনতেন না। একাত্তরে ত্রিপুরার স্টুডেন্টস কোম্পানির (বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ব্রিগেড) প্রথম ভর্তি নেওয়াদের অন্যতম সিরাজ উদ্দিন গুরুতর আহত হলে সতীর্থদের সবাই তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে না রেখে তখনই আগরতলার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। সেটা জাফর ভাই নাকচ করে দেন।

মতিনগর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির মেলাঘরে স্থানান্তরের সময় এক ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনায় সিরাজ আহত হয়েছিলেন। আবেগে কাঁপতে কাঁপতে তাঁর সঙ্গীদের উচ্চ কণ্ঠে যুক্তি ছিল, ‘এই জঙ্গলে কী করে তার চিকিৎসা হবে। সে তো মারা যাবে অঘোরে।’ জাফর ভাই একটুও ভড়কে না গিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘এখানে আমাদের যা আছে, তা দিয়েই চিকিৎসা করব।

তোমরা এখানে আছ, চোখের সামনে থাকবে, তার ভালো লাগবে। আগরতলায় কে তার পাশে থাকবে? একাকী আরও কষ্টে পড়বে।’ ওষুধের চেয়ে পথ্য যে বেশি সহায়ক, সেটা তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন। বলতেন, ‘ডাক্তারদের কেবল হেলথ ফেইলিয়র নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না, ক্রপ ফেইলিয়রের সঙ্গে হেলথ ফেইলিয়রের সম্পর্কটা বুঝতে হবে।’

সে যাত্রায় সিরাজ বলতে গেলে সময়ের আগেই প্রশিক্ষণে ফিরতে পেরেছিলেন। সম্প্রতি পত্রিকায় সে কথা তিনি নিজে অকপটে লিখেছেন।

ফিল্ড হাসপাতালের ওষুধ জোগাড় করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এক হাতে চিকিৎসা করা অন্য হাতে ওষুধ সংগ্রহ আর সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে তাঁকে সব সময় দৌড়ের ওপর থাকতে হতো। এর মধ্যে খবর পান, মানবিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের কাছে বিদেশ ও ভারতের নানা সূত্র থেকে ওষুধ এসে জমা হচ্ছে। ত্রিপুরা থেকে কলকাতা সহজ পথ না, এরপরও তিনি সেখানে ছুটে যান। কলকাতা অক্সফাম অফিসের দায়িত্বে থাকা জুলিয়ান ফ্রান্সিস ওষুধের জন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সেই হন্যে হয়ে ছুটে আসাকে হানা বা রেইড বলে আখ্যায়িত করেন।

মানবিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম সাথি সংস্থা বা পার্টনার প্রতিষ্ঠান ছাড়া কাজ করে না। কিছু নীতিমালা মেনে একটা চুক্তির ভিত্তিতে সহযোগিতা করে থাকে। তারা সরাসরি যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এড়িয়ে চলে। এসব সীমাবদ্ধতা পাশ কাটিয়ে চিকিৎসা ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের প্রচেষ্টার বাইরে বেসরকারি উদ্যোগের পাশে অক্সফাম শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিল। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সেই কথিত ‘হানা’ বিলম্বিত হলে কাজটা সহজ হতো না। পরবর্তী সময়ে জুলিয়ান ও জাফরুল্লাহর বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়েছে। কিন্তু জাফরুল্লাহ সেই বন্ধুত্বের জোয়ারে গা ভাসিয়ে চোখ বন্ধ রাখেননি। বিদেশি সংস্থার নানা পদক্ষেপকে বরাবর চ্যালেঞ্জ করে গেছেন।

অক্সফামের তদানীন্তন ভারত কর্মসূচির প্রধান কানাডার নাগরিক রেমন্ড করনওয়ার (Raymond Cournoyer) ষাটের দশকে বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি তখন জুলিয়ানের বস। শিক্ষক রেমন্ড তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন এ দেশের মানুষের সক্ষমতার কথা, তাদের জীবনসংগ্রামের সফলতার কথা। একটা জনযুদ্ধ আর তার সঙ্গে যুক্ত শরণার্থী সমস্যার রাতারাতি পরিসমাপ্তি ঘটবে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ায় অক্সফাম তার সংগৃহীত সব অর্থ–সম্পদ ও হস্তান্তরযোগ্য মালামাল রেডক্রস বা সমতুল্য অন্যান্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। রেমন্ড করনওয়ার সাহসের সঙ্গে, যুক্তির সঙ্গে সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি এ দেশের তরুণদের মধ্যে দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা দেখেছিলেন। আজকের ব্র্যাক প্রথম অনুদান পায় অক্সফামের বেঁচে যাওয়া তহবিল থেকে; বাকিটা ইতিহাস।

এবার জাফরুল্লাহর তাঁবুতে রেমন্ড ‘হানা’ দেন। প্রস্তাব দেন আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার। ত্রিপুরা থেকে ফিরে বাংলাদেশ হাসপাতাল তখন একটু একটু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়ে উঠছে। সাভারে ধু ধু মাঠের মধ্যে তাঁবু খাঁটিয়ে জাফরুল্লাহ তখন নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর ধনুর্ভঙ্গপণ ‘বিদেশি টাকা ছোঁব না’। দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশের টাকায় দেশ গড়ে উঠবে। রেমন্ড করনওয়ারকে তিনি (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) তাঁর পেছনে সময় নষ্ট না করার পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দেন। রেমন্ড মানুষ চিনতেন। তিনি বারবার যান সাভারের তাঁবুতে। জাফরুল্লাহকে সদ্য স্বাধীন দেশের বাস্তবতা বোঝান, নিজের জীবনের উদাহরণ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাঁদের পরিবারের চরম অনটনের বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন, সাভারে বৃষ্টিতে কাপড়ের তাঁবু কতটা অচল, তা–ও তুলে ধরেন। ঘর তাঁকে তুলতেই হবে, আর সেটা করতে হবে বর্ষার আগেই।

শেষ পর্যন্ত বাস্তব অবস্থা মেনে রাজি হন জাফর ভাই, তবে তাঁর শর্তে। অন্য এক ইতিহাসের সূচনা হয় এরপর। প্রয়াত রেমন্ড করনওয়ার শেষবার যখন ঢাকায় আসেন, তখন গণস্বাস্থ্যের নগর হাসপাতালে জাফর ভাই তাঁর সব নতুন–পুরোনো সহকর্মীদের ডেকেছিলেন। অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার উদ্যোক্তা ও কর্মীদের অনেকেও ছিলেন। চা পান করতে করতে রেমন্ডকে একা পেয়ে জানতে চেয়েছিলাম, ‘কোনো ভণিতা না করে বলেন তো জাফরুল্লাহ চৌধুরী কেমন মানুষ?’ চায়ের কাপটা নামিয়ে ফিসফিস করে রেমন্ড বলেছিলেন, ‘পারহ্যাপস হি ইজ দ্য মোস্ট মিসআন্ডারস্টুড পারসন ইন আওয়ার টাইম’, যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমাদের কালে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল বুঝেছে তাঁকে।’

ততক্ষণে জাফর ভাই রেমন্ডের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। রেমন্ড তাঁর গন্ধ টের পেতেন। তাঁর দিকে না তাকিয়েই বললেন, ‘চৌধুরী, আমি তোমার বন্দনা করছি এই তরুণের কাছে। কিছু মনে কোরো না।’ জাফর ভাই হাসতে হাসতে সরে যান। আমাদের আলোচনা চলতে থাকে। রেমন্ড বলেন, ‘তোমরা তাঁকে এনজিও নেতৃত্বে ডেকে এনেছিলে, এডাবের (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সংগঠন) চেয়ার করেছিলে। আবার মেয়াদ শেষ না হতেই তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছ। এখন সাধু সেজে আমাকে প্রশ্ন করছ জাফরুল্লাহ মানুষ কেমন? তোমাদের অনেক ভাগ্য তাঁর মতো একজন সাচ্চা মানুষ তোমরা পেয়েছিলে।’

গ্রাম সাভারে গণস্বাস্থ্যের বিস্তার সহজ ছিল না

নারীদের সাইকেল চালানো শেখানো যত সহজ, তার চেয়ে অনেক অনেক কঠিন ছিল সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরা, গ্রামে নারী ও কিশোরীদের কাছে গিয়ে শরীরের যত্ন নিয়ে কথা বলা। দেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পর বিশ্রামগঞ্জে চিকিৎসা নেওয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাভারে এক আত্মীয়ের বাসায় (সাভারের গাজীরচট) বেড়াতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সাইকেল চড়া দেখে। নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে যুদ্ধে স্বাধীন একটা দেশে এটাই তো স্বাভাবিক ছিল।

বিপ্লব সব ক্ষেত্রে না হলে বিপ্লব অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, ‘…অবাক হই এ কারণে যে তখনকার বাংলাদেশের সমাজে এমনটা ছিল অকল্পনীয়। রক্ষণশীল ওই সমাজে মেয়েদের সাইকেল চালানোর কথা চিন্তা করা যায় না। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তাঁরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের…।’ তিনি ঠিকই বলেছেন, কাজটা সহজ ছিল না। রাস্তায় কেউ কেউ ইট হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকত। সাইকেলে চড়া নারী দেখলেই তারা ঢিল ছুড়ত কূপমণ্ডূকতার পক্ষে।

অনেকে আহত হয়েছেন, অনেকে রক্তাক্ত শরীরে ফিরে এসেছেন কেন্দ্রে। ইটের আঘাতে নিহত হন স্বাস্থ্যকর্মী ঝর্ণা। অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্য এক শহীদ যেন। হাতুড়ে চিকিৎসকদের ব্যবসা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রাতের অন্ধকারে খুন করা হয় শিমুলিয়া উপকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী নিজামকে। দোষী ব্যক্তিদের আজও বিচার হয়নি।

জাফরুল্লাহকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা কম হয়নি

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ওষুধনীতি–সংক্রান্ত আইন জারির পর তা বানচালের জন্য শুরু হলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর খেলা। সাংবাদিক লেখক কাজী জাওয়াদ লিখেছেন, ‘ফার্মাসিউটিক্যালসে হামলা চালানো হলো। তখন বেশ কয়েক রাতে তাঁকে (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) সাভারে পৌঁছে দিয়েছি।’

সর্বহারা পার্টির সিরাজ সিকদারের মামলায় তাঁকে ‘অন্য কায়দায়’ ‘নিয়ে যাওয়া’ হয়েছিল। তখনকার দিনগুলো রাতের মতো আঁধার ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছায় তাঁকে ‘যেখান থেকে আনা হয়েছিল’, সেখানেই রেখে আসা হয়। তাঁর গাড়িকে ট্রাকের ধাক্কা দেওয়া একসময় নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। প্রথম দিকে দক্ষ বিশ্বস্ত গাড়িচালক মস্তফা ভাই, পরে বাংলাদেশের প্রথম নিবন্ধিত নারী পেশাদার গাড়িচালক সালেহা আপার স্মৃতির ঝুলিতে এ রকম অনেক রোমহর্ষক ঘটনা আছে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, আদালত অবমাননা, মাছ চুরি, ফল চুরি, চাঁদাবাজি, মারধর ও জমি দখল প্রভৃতি অভিযোগ আনা হয়েছে নানা সময়ে। অভিযোগ থেকে মামলা, আদালতের সওয়াল, হাজিরা ইত্যাদিতে তাঁকে হয়রান করা হয়েছে বছরের পর বছর। ‘এক ঘণ্টার দণ্ড’ দিয়ে, সামান্য জরিমানা করে আদালত তার মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু কেউ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বুঝতে চায়নি, বুঝতে পারেনি।

ভেজাল ধরার স্মার্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা গরিবের চিকিৎসাকেন্দ্র গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে, ফার্মাসিউটিক্যালে ঝটিকা ‘হানা’ দিয়ে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তা টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমএ) ডা. জাফরুল্লাহর সদস্যপদ খারিজ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন বাতিলের কথাও উঠেছিল কমপক্ষে দুবার।

কথিত প্রগতিশীলেরাও তাঁকে এড়িয়ে চলতেন

ডা. জাফরুল্লাহ যখন একা হাতে ওষুধনীতির পক্ষে কাজ শুরু করেন, তখন বামপন্থী শিবিরের কেউ কেউ তাঁর বিরোধিতা করেছেন। একটা জনহিতকর সংস্কারের পক্ষে কথিত প্রগতিশীলদের সক্রিয় সমর্থন দূরে থাক, বরং বহুজাতিক মুনাফাখোরদের পক্ষ নিয়েছেন অনেকে। এঁদের কেউ কেউ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাকরি করতেন বলেই যে তাঁরা বহুজাতিকদের সঙ্গে ছিলেন, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। চাকরির চেয়ে দেশটা তাঁদের কাছে সব সময়ই ছোট ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের স্মারক তাঁরা জাদুঘরে বা বাড়ির আলমারিতে রাখেন, হৃদয়ে নয়। এরপরও ওষুধনীতি পাস হয়ে যায় ১৯৮২ সালে। কিন্তু আটকে যায় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি। এই নীতিতে মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ নিয়ন্ত্রণের বিধান যুক্ত হওয়ায় চিকিৎসকেরা ধর্মঘট পর্যন্ত করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলাও হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন আর স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধাচরণকে রাজনৈতিকভাবে সমার্থক করে তোলা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিজেদের সমর্থকদের খেপিয়ে তোলা হয়েছিল।

সব যুদ্ধের শেষ হয় জয়–পরাজয়ের মধ্যে। কিন্তু জীবনযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হয় সবাইকে। সেই যুদ্ধে জয়ী হয় মৃত্যু, সেটা সব সময়। জাফর ভাইও হেরে গেলেন, কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করেছেন। কাউকে কাউকে বলেছিলেন, ‘আর দুই বছর বাঁচতে চাই।’ দুই বছর সময় পেলে তিনি হয়তো ক্যানসার হাসপাতালের শুরুটা দেখে যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁর তো স্বপ্ন ছিল জাতির ক্যানসার সারানো। সারথিরা পারবেন কি?