এ কোন ছাত্রলীগ, দরকার নেই: ওবায়দুল কাদের

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা দেখে ক্ষোভ ঝাড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলনে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় মঞ্চে বসে থেকেও বক্তৃতা দিতে পারেননি আমন্ত্রিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা। এ নিয়ে সভা মঞ্চেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা নিয়েও ক্ষুব্ধ হয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘কথা শুনবে না, এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নাই। অপকর্ম করবে, এই ছাত্রলীগ দরকার নেই।’

আজ শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এই সম্মেলনে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ বক্তব্য দিতে পারেননি। আর সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিয়েছেন।

বক্তব্য দিতে এসে এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ ঝেড়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আজকে নানকের মতো আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত, প্রেসিডিয়াম, সাবেক মন্ত্রী, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সময়ের অভাবে বক্তৃতা করতে পারল না। আপনারা মাইক ধরলে ছাড়েন না। আজকে জুমার দিন খেয়াল থাকে না। এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। সুশৃঙ্খল করুন। সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নাই। অপকর্ম করবে, এই ছাত্রলীগ দরকার নেই। দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই আজকে অঙ্গীকার।’

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বাহাউদ্দিন নাছিম, কারা নির্যাতিত নেতা, আমাদের জয়েন জেনারেল সেক্রেটারি বক্তৃতা করতে পারলেন না। আমন্ত্রিত অনেকেই আজকে মহানগরের প্রেসিডেন্ট দক্ষিণের, উত্তরের, প্রেসিডেন্ট মান্নাফি ভাই (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোহাম্মদ মন্নাফি), বজলু ভাই (ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান), সেক্রেটারি কচি (ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান ওরফে কচি), হুমায়ুন (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর)—এঁরাও বক্তা ছিলেন। বক্তৃতা করতে পারেননি। আমাদের বিপ্লব (বিপ্লব বড়ুয়া), দপ্তর সম্পাদক, বক্তৃতা করতে পারেনি। তাহলে দাওয়াত দিলেন কেন? একটু একটু করেও বলতে পারল না! আপনারা দুজনেই এক ঘণ্টা! মনে নেই আজ শুক্রবার। লেখকের (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য) না হয় মনে নেই, জয়ের (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ওরফে জয়) কি মনে ছিল না? এ কোন ছাত্রলীগ।’

এমন বক্তব্য দেওয়ার আগে ওবায়দুল কাদের যখন বক্তৃতা শুরু করেন, তখনো উপস্থিত নেতা–কর্মীরা বিরামহীনভাবে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওবায়দুল কাদের এসব স্লোগান বন্ধ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘স্লোগান বন্ধ না করলে আমি বক্তৃতা করব না। স্লোগান বন্ধ করো। স্লোগান বন্ধ। ব্যানার নামাও। সব ব্যানার–প্ল্যাকার্ড নামাও। যারা নামাচ্ছ না, ব্যবস্থা হবে। সব নামাও। সব নামাও। নো স্লোগান। আমি বক্তৃতা করব সংক্ষেপে। তারপর যত পারো স্লোগান দিবা।’

এরপর কিছুক্ষণ বক্তব্য দেওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আবারও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওবায়দুল কাদেন। কারণ, তখনো স্লোগান বন্ধ হয়নি। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বন্ধ করেন। বন্ধ করেন। তারপরও স্লোগান দেয়। যার নামে স্লোগান হবে, তাকে বানাব না। নেত্রীকে বলে দেব।  স্লোগান যার নামে হবে সে বাদ। বলে দিচ্ছি।’

এরপর স্লোগান বন্ধ হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে, যে বুলেট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, সেই বুলেটের চেয়ে তিনি অনেক বেশি শক্তিশালী। যে বুলেট শেখ হাসিনাকে, শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, বেগম খালেদা জিয়া সেই বুলেট আপনাকেও বিধবা করেছে। যদি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত না থাকতেন, আরেকটা খুনি চক্র তাঁকে হত্যা করার সাহস পেত না।’

ওবায়দুল কাদের বক্তব্য চলাকালে আবারও ছাত্রলীদের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। তখন বিরক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটাই কি ছাত্রলীগ, এটাই কি ছাত্রলীগ, কোনো শৃঙ্খলা নাই! লেখক, জয়—এটাই কি ছাত্রলীগ? নামাতে বললাম পোস্টার নামায় না। কারা আমি খোঁজ নিচ্ছি। পোস্টার নামাও। তারপরও নামায় না। নামা, সব নামা, পোস্টার নামা। স্লোগান বন্ধ। পেছনে এটা কি! সব নেতা! কর্মী কোথায়? এত নেতা স্টেজে, কর্মী কোথায়?

‘এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ এই ছাত্রলীগ নয়। মুজিব কোট পরলেই মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না। মুজিব সৈনিক হতে হলে মুজিবের আদর্শের সৈনিক হতে হবে। শেখ হাসিনার খাঁটি কর্মী হতে হবে। খাঁটি কর্মী বিশৃঙ্খলা করে না। সব নেতা হয়ে গেছে। কমিটি ছাড়া সব বের হয়ে যায়।’

ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য চেয়ার থেকে উঠে মঞ্চে থাকা নেতা-কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। অনেকেই মঞ্চ থেকে নামতে না চাইলে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বাধ্য করেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মদ মোহাম্মদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

এদিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান। তবে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন (৬ ডিসেম্বর) অথবা তারও পরে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে পারে।

এদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না কার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জুমার নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল, তাই কেন্দ্রীয় নেতারা চলে গেছেন। এই সম্মেলন বিকেলে করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের বিকেলে সময় দিতে পারবেন না, তাই বাধ্য হয়ে সকালে অনুষ্ঠান করেছি। জুমার নামাজের দিন হওয়ার কারণে সবাইকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যায়নি।