রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কলেরা প্রতিরোধে টিকা বড় ভূমিকা রেখেছে: ফেরদৌসী কাদরী
‘রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কলেরার প্রাদুর্ভাব ও মহামারি প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বড় রকমের কোনো প্রাদুর্ভাবের অনুপস্থিতি থেকে এটা প্রমাণিত হয়।’
কথাগুলোর বলেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ পরিচালক ফেরদৌসী কাদরী। তিনি আজ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন। আইসিডিডিআরবি এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের শিবিরে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কলেরা নজরদারি’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম ও ফলাফল তুলে ধরতে এই সেমিনার আয়োজন করে। এতে সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিওসহ প্রকল্পের বিভিন্ন সহযোগীরা অংশ নেন।
ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে কলেরার টিকাদানের সাফল্য এসেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, সিডিসি-ডিজিএইচএস, আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ আমাদের অন্য অংশীদারদের অসামান্য নেতৃত্ব এবং সমর্থনের মাধ্যমে।’
কক্সবাজারে মুখে খাওয়ার কলেরা টিকাদান কার্যক্রমের সাফল্য উপস্থাপন করতে গিয়ে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, সাত দফা টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো শিবিরে মানুষকে শতভাগ টিকাদান করা হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা জনগণ ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৯ ডোজ টিকা পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি বসবাসকারী ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৯৭ স্থানীয় জনগণ ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৮ ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা পেয়েছে। এ রকম জটিল পরিবেশেও টিকাটি ভালোভাবে গৃহীত হয়।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবির হাসপাতালপ্রধান ডা. বাহারুল আলম প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ২০১৭ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আইসিডিডিআরবি ও ইউনিসেফের যৌথ পরিচালনায় একটি মাঠপর্যায়ের মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
প্রকল্পটির আওতায়, রোগের নজরদারি, চিকিৎসা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকাদানের মাধ্যমে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে আইসিডিডিআরবি, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে দুই হাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। টেকনাফে পাঁচটি ডায়রিয়া চিকিৎসাকেন্দ্র (ডিটিসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
আইসিডিডিআরবির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ইমেরিটাস বিজ্ঞানী এএসজি ফারুক ডায়রিয়া চিকিৎসাকেন্দ্রভিত্তিক নজরদারির ফলাফল উপস্থাপন করেন।
এএসজি ফারুক জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা) ও কৃশকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) এবং ওজনস্বল্পতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্লোরিনযুক্ত ট্যাপের পানির ব্যবহার, টয়লেট ব্যবহার, খাওয়ার স্যালাইন এবং টিকা গ্রহণের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রেজেন্টেশনের পর ইউনিসেফের হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. মাইনুল হাসান এবং ডা. হোর্হে মার্টিনেজ বক্তব্য দেন। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এবং বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজনুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ।