প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাস দেখা হলো না বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালামের
একরাশ অভিমান নিয়ে চিরবিদায় নিলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নের অম্বরনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম। লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাস তৈরি না করেই চলে গিয়েছিল ঠিকাদার। এ নিয়ে চার দিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন সব অভিযোগের ঊর্ধ্বে তিনি। বীর নিবাসে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাবেন এমন আশা ছিল তাঁর। সে আশাও পূরণ হলো না সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে নানা রোগে শয্যাশায়ী থাকার পর গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম। মৃত্যুর দিনই আবুল কালামসহ অম্বরনগর ইউনিয়নের আটজন মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ হওয়া বীর নিবাস নির্মাণ না হওয়া নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে এবং পরদিন ছাপা পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ ছিল বীর নিবাস নির্মাণের জন্য নিয়োগ করা ঠিকাদার ‘মজবুত করে’ ঘর তৈরি করার কথা বলে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন।
টাকা নিয়ে তিনজন মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাস তৈরি শুরু করে মাঝপথে কাজ বন্ধ রেখে উধাও হয়ে যান ঠিকাদার রনি মিজি। আর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালামের কাছে দাবি করা লাখ টাকা না দেওয়ায় তাঁর জন্য বরাদ্দ হওয়া বীর নিবাস নির্মাণের কাজই শুরুই করা হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালামের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার আগে তাঁকে বিদায়ী রাষ্ট্রীয় সালাম জানাতে সেখানে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহিন মিয়া। জানাজায় অংশ নেন আবুল কালামের দীর্ঘদিনের সহপাঠী ও সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
আবুল কালামের বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি আসবাবপত্র তৈরির কাজ করেন, যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বীর নিবাস তৈরির জন্য লাখ টাকা ঘুষ দিতে পারেননি ঠিকাদারকে। তাই তাঁদের ঘর তৈরির কাজ শুরুই করেননি ঠিকাদার। তিনি বলেন, তাঁরা যে ঘরে থাকেন, তার ওপরের চালাগুলো ফুটো হয়ে গেছে। অল্প বৃষ্টিতেই ঘরের সবকিছু ভিজে যায়। তাই ওপরে ত্রিপল বিছিয়ে দিয়ে কোনোমতে ভাঙা ঘরে থাকছেন। তাঁর বাবার বড় আশা ছিল জীবনের শেষ সময়টুকু প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই তাঁকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো।
জানাজায় অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারের কাছে সহযোদ্ধা আবুল কালামের বিষয়ে জানতে চাইতেই তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আবুল কালাম খুবই ভালো একজন মানুষ ছিলেন। শারীরিকভাবেও বেশ শক্তি-সামর্থ্যবান ছিলেন। কিন্তু বছরখানেক ধরে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। স্বল্প রোজগার থেকেও সাধ্য অনুযায়ী টাকাপয়সা খরচ করেছে তাঁর বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু বাবাকে সুস্থ করতে পারেননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার রনি মিজিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এ জন্য এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালামের মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুবই মর্মাহত হন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রশিক্ষণের কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি রাষ্ট্রীয় সালাম জানাতে যেতে পারেননি। তাঁর চেষ্টা থাকবে প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধাসহ অম্বরনগরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ হওয়া বীর নিবাস যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিতে পারেন।