প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি আছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: বাসস

দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি খাতে কী অবস্থা, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গবেষকেরা কী বলছেন তা নয়, নিজেরা গবেষণা করে, নিজেরা দেখে, মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি আছে।

জ্বালানিসংকট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জ্বালানিসংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাবটি আনেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বিরোধী দলের এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুজিবুল হকের আনা প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ।

বিশ্বে প্রতিমুহূর্তে অর্থনীতির সূচকগুলোতে যে ওঠানামা হচ্ছে, সেখানে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেই সরকার ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপদে পড়তে হয়েছে। উন্নত দেশগুলোও বিপদে। তারাও সাশ্রয়ী হচ্ছে। জার্মানি ও ব্রিটেনের আরও খারাপ অবস্থা। এখন তারা চিন্তা করছে শীতকালে কী করবে। অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, সব বিবেচনা করে জ্বালানি তেল ও সারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে, পাঁচ টাকা। যুদ্ধ শুরুর পরপর দাম বাড়ালে অনেক বেশি দাম বাড়াতে হতো। মানুষের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের ‘রিটার্ন’ আসবে কি না, সেদিকে আগেই নজর দেওয়া হয়। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার কথা চিন্তা করেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে। মোটা কমিশনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কোনো প্রকল্প নেয়নি। এরশাদ, জিয়া ও খালেদা জিয়ার আমলে এটা করা হতো।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর কাছে ক্ষমতা, দেশের মানুষের সেবা করা। লুটপাট ও দুর্নীতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয়।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় রাজনীতি, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নাজুক ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে, সে সময় করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিল। আবার যখন দেশ উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসতে শুরু করল, তখন এল রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশকেই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ডাল, চিনিসহ অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে এখন আগের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপেও মূল্যস্ফীতি এতটা বেড়েছে, যা আগে কেউ ধারণাও করতে পারেনি। নিজেরা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই এখন বিপদে। ইউরোপের কিছু দেশে ৪০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাপানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ইউরোপে গ্যাস, বিদ্যুৎ এমনকি পানিও রেশনিং করা হচ্ছে। জাপান ও চীনে লোডশেডিং হচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ৬০ দিনে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা টোল এসেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করা যাচ্ছে। তাজা ইলিশ ঢাকার বাজারে চলে আসছে।

বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডলারের সংকট উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রবাসী আয় বাড়াতে প্রণোদনা ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। রিজার্ভ নিয়ে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার মতো টাকা থাকলেই সেটি ঝুঁকিমুক্ত বিবেচনা করা হয়। দেশে পাঁচ–ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। হতাশ হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। আর বাংলাদেশ সব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেছে। কখনো বাংলাদেশ খেলাপি হয়নি, হবেও না।