রিটে তারেক রহমানের ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন দিতে বললেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে আট বছর আগে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
যে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই রিটে বিবাদী তারেক রহমানের উল্লেখিত ঠিকানা সংশোধনের জন্য রিট আবেদনকারীপক্ষকে আবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী (লিনা) ওই রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন হাইকোর্ট রুলসহ ওই আদেশ দেন। সম্প্রতি রুল শুনানির উদ্যোগ নেয় রিট আবেদনকারীপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।  

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও সানজিদা খানম শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। বিএনপিপন্থী আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল, এম বদরুদ্দোজা, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুস বক্তব্য তুলে ধরেন।

শুরুতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী সানজিদা খানম বলেন, অন্য কেউ শুনানি করতে পারেন। তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) কার পক্ষে এসেছে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ায় সমীচীন। কারো পক্ষে পাওয়ার ছাড়া (মামলা পরিচালনার অনুমতি) ছাড়া তাদের শুনানি করার অধিকার আছে কি না?

হাইকোর্টের বেঞ্চটির দরজার সামনে পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আদালতের সামনে পুলিশের উপস্থিতি দুঃখজনক। আইন পেশায় ৪৫ বছর, এ অবস্থা দেখিনি। আদালত বলেন, আপনি কোন ক্যাপাসিটিতে এখানে শুনানি (বক্তব্য উপস্থাপন) করছেন ? তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন অফিসার অব কোর্ট হিসেবে বলছি। একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে আদালতকে সহায়তা করছি।

এক পর্যায়ে আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তারেক রহমানের সর্বশেষ ঠিকানা ছিল ৬ মইনুল রোডের বাড়ি। এই বাড়ি সরকার নিয়ে নিয়েছে। তারপরে তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে হাসপাতালে এবং পরে লন্ডনে যান। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান। তিনি পালিয়ে যাননি। রাজনৈতিক নেতা এসেছে, আরেকজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য বন্ধ করার জন্যে—এটি অস্বাভাবিক।

এরপর আইনজীবী এম. বদরুদ্দোজা বলেন, রিট তারেক রহমানকে নয় নম্বর বিবাদী করা হয়। বাড়ি নম্বর–৬ মইনুল, রুম নম্বর–৮৬ উল্লেখ করা হয়েছে। রুম নম্বর–৮৬ হয়? এটি কী সংশোধন করেছে ? এই ঠিকানা সংশোধন হয়নি। সংশোধন করতে হবে।

এক পর্যায়ে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, জারিকারকের দেওয়া রিপোর্ট আদালতের সামনে এসেছে। নয় নম্বর বিবাদীর (তারেক রহমান) ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। চার নম্বর বিবাদীও প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে বলা আছে নয় নম্বর বিবাদী দেশের বাইরে। রুম নম্বর নিয়ে টাইপে ভুলের জন্য রিপোর্ট আসেনি, তা কিন্তু নয়। তত্ত্ববাধায়ক সরকারের সময় বিদেশে গেছে, আর ফিরে আসেনি তা উল্লেখ আছে। তারপর কতবার তার পাসপোর্ট নবায়ন হয়েছে, তাও বলা আছে প্রতিবেদনে। টাইপে  ভুলে রোডের জায়গায় রুম নম্বর হয়ে গেছে। তারেক রহমান পলাতক। ২০১৫ সালে রুল হয়েছে। রুল হওয়ার সব আদালতের নির্দেশনা সব গণমাধ্যম মেনে চলেছে। তবে অতি সম্প্রতি আমরা দেখছি, মিটিংয়ের মধ্যে তারেক রহমানের বক্তৃতার ভিডিও প্রচার করা হয়। এতে আদালতের অন্তবর্তীকালীন আদেশের লঙ্ঘন হচ্ছে।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, সংশোধন আবেদন আজকের মধ্যে দিতে পারবেন? তখন আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও সানজিদা খানম বলেন, আজই দিয়ে দেবো।

পরে আইনজীবী সানজিদা খানম প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধন আবেদন হলফনামা করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।