চট্টগ্রামে দুর্গাপূজার মণ্ডপে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া

বাঁশ বেতের কারুকাজের তৈরি দুর্গাপূজার মণ্ডপ নজর কেড়েছে ভক্ত–দর্শনার্থীদের। আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম, ২৩ অক্টোবর
ছবি: সৌরভ দাশ

মণ্ডপে ঢোকার মুখেই বাঁশ–বেতের কারুকাজের তৈরি সুদৃশ্য ফটক। ফটকের ঠিক ওপরে বিশাল শিবমূর্তি, যেন মণ্ডপপানে তাঁর মোহাবিষ্ট আমন্ত্রণ। এরপর প্রাণের টানে ছুটে চলা। বিশাল জনস্রোত কী অপার মোহে ছুটছে মণ্ডপের দিকে। যেতে যেতে বাঁশ–বেতের নকশার অপরূপ প্রদর্শনী।

যান্ত্রিক নগর জীবনে বাঁশ–বেতের হারানো দিনের পুরোনো গানের মতো ঐতিহ্যের খোঁজ মেলে এই মণ্ডপে। সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে একটা গ্রামীণ ছোঁয়া। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের গোসাইলডাঙা একতা গোষ্ঠীর পূজার কথা।

বাঁশের তৈরি কারুকাজের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে শিবমূর্তি। আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম, ২৩ অক্টোবর
ছবি: সৌরভ দাশ

একতা গোষ্ঠীর সভাপতি লিটন চৌধুরী বলেন, ‘নগর জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা আমরা আগের ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলেছি। ইট–কংক্রিটের ভিড়ে গ্রামীণ আবহ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এবার আমরা সেই পুরোনোর খোঁজ করেছি। এই থিমের মূলে ছিলেন আমাদের সদস্য জয় দাশ। সবাই মিলেই এই কাজই করেছে। এমন প্রদর্শনী দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো নারী–পুরুষ।’

শুধু বাঁশের কারুকাজ নয়, দৃষ্টি কাড়ছে মূর্তিগুলোও। ফাঁকে ফাঁকে মোহনীয় নানা মূর্তি, কোনোটা মাটির, কোনোটা শোলা বা বাঁশের, আবার কোনোটা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। ফটক থেকে একটু এগোলেই বাঁ দিকে দেবী দুর্গা ও তার সন্তানদের চোখে পড়বে। কালো আবরণের এই মূর্তিটা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি।

এরপর আরেকটু এগোলেই বাঁশ–বেড়ার দেয়ালে টানানো হয়েছে কয়েকটি রংতুলির চিত্রকর্ম। তাতে উঠে এসেছে কিষান–কিষানির দিনলিপি, যেন হেমন্ত দিনে নতুন ফসল তোলার ধুম লেগেছে। শারদোৎসবের পরে নবান্ন উৎসবকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এই চিত্রকর্ম।

ফটক আর মূল প্রতিমার মাঝামাঝি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গোলাকার আরেকটি ফটক। ওই ফটক ধরে দুপাশের চারুকলা আর চিত্র দেখতে দেখতে এক সময় মূল প্রতিমার কাছেই পৌঁছানো যায়।

তার আগে দুই পাশের দেয়ালে বাঁশ দিয়ে তৈরি অসংখ্য ত্রিনয়নী সম্ভাষণ জানাচ্ছে। এসব ত্রিনয়নীর মাঝখানে শোভা পাচ্ছে আরও একটা শিবমূর্তি। তার পাশে মূল ফটকের দিকে মুখ করে আছেন দেবী দুর্গা।

বাঁশ–বেতের চিত্রকর্ম ফুঁড়ে বেরিয়ে আসেন দশভুজা। আলোকসজ্জার কথাটিও বিশেষভাবে বলতে হয়। নানা রং আর বর্ণের আলোকচ্ছটায় দেবী দর্শনের পূর্ণতা মিলবে এখানে। শিবঠাকুর বের হয়ে আসছেন একটি নীলাভ জগৎ থেকে, নানা রঙে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে দেবীর মুখমণ্ডল। মণ্ডপের ছাদেও নানা রঙের বাতি।

বাতিগুলোর শেড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ–বেতের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ।
এবার ফিরতি পথে আবার আরেকবার চোখ বুলিয়ে আসুন চিত্রকর্মে। সুযোগ মিললে একটি সেলফিই–বা কেন নয়। বের হয়ে সড়কে অপরপাশে গোসাইলডাঙা কল্পতরু সংঘের পূজাটা দেখতে ভুলবেন না। সেখানে নীলপদ্মের মাঝখান থেকে বের হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। দেবীর নীল আভা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।