কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছাত্র হত্যা, গুলি ও হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেন গুলি চালানো হলো, প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা সে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেন তাঁরা।
আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষকদের দুটি সংগঠন এ ঘটনায় পৃথক দুটি কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভ সমাবেশ দুটিতে হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান শিক্ষকেরা।
আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এই ব্যানারে শিক্ষকদের প্রথম কর্মসূচি শুরু হয়। এতে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য।
এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা আমরা বারবার বলি। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে তিনটি আদর্শের কথা বলা হয়েছিল, এর প্রথমটি হচ্ছে সাম্য। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল কথাও সেটা। এটা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্বাধীনতার চেতনা। এটি বাস্তবায়নের জন্যই তারা মাঠে নেমেছে। তাহলে কেন তাদের বুকে গুলি করা হলো? কেন তাদের রাজাকার বলা হলো? ওরাই এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘দেশকে আজ নরকে পরিণত করা হয়েছে। একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে যারা গুলি চালাল, আমরা তাদের বিচার চাই।’
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, ‘যে বর্বরতা হয়েছে, সেটি এই প্রজন্ম দেখেনি, এর আগের প্রজন্মও দেখেনি। আমাদের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনীকে গুলি চালানোর হুকুম কারা দিয়েছে, তা জানতে চাই। প্রতিটি হত্যার নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে।’
ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, মোহাম্মদ আবুল বশর প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে শিক্ষকেরা একটি মৌন মিছিল করেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের ব্যানারের এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরে শিক্ষকদের আরেকটি অংশ মানববন্ধন করেন। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকসমাজের ব্যানারে দুপুর ১২টায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। এ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া শিক্ষকদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।
কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব বলেন, ‘আমরা ছাত্রসমাজের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। তাদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, এর বিপক্ষে আমরা দাঁড়িয়েছি। ছোট্ট একটা ঘটনাকে মর্মান্তিক ও ভয়ংকর পর্যায়ে রাষ্ট্র যে টেনে নিয়ে গেল, এটা কীভাবে সম্ভব হলো। ৫৩ বছরের এই দেশে শুধু স্থাপনাগত সমৃদ্ধি হয়েছে। মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার এবং মানুষের নির্ভয়ে থাকার সঙ্গে এই সমৃদ্ধির কোনো যোগ নেই।’
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২১১টি প্রাণের ক্ষতি স্থাপনা ধ্বংসের ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি। রাষ্ট্রের স্থাপনা নিয়ে কথা বললে আমরা প্রাণের বিষয়ে কথা বলছি না। এখনো যারা নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে, জেলে রয়েছে, নজরদারিতে রয়েছে, তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া উচিত। স্বাভাবিক নিয়মে নিরাপত্তার সঙ্গে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া উচিত।’
এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক শামীমা ফেরদৌসী, মো. ইমাম হোসাইন, মো. কামাল উদ্দিন, খাদিজা মিতু, মো. শফিকুল ইসলাম, মুনমুন নেছা চোধুরী, ফারজানা আহমেদ, সায়মা আলম ও স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক।