সাইফুল পাড়ি দিতে চান ইংলিশ চ্যানেল

বাংলা চ্যানেল সাঁতারে নামার আগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকতে সাঁতারুরা। গতকাল সকালেছবি: প্রথম আলো

‘সাঁতারের সময় জেলি ফিশগুলো বারবার সমস্যা করছিল। তাতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সফলতা পেয়েছি। একদিন বিশ্বের কঠিনতম ইংলিশ চ্যানেলসহ সাতটা চ্যানেল পাড়ি দিতে চাই। দেশের বাইরে লং ডিস্টেন্স সাঁতার দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে চাই।’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রাসেল। টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলা চ্যানেলে সাঁতারে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার চ্যানেলটি পাড়ি দিতে তিনি সময় নিয়েছেন ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে সাগরে ঝাঁপ দেন ২ নারীসহ ৪৩ জন সাঁতারু। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের স্রোতোধারাটির নাম ‘বাংলা চ্যানেল’। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু হয় সাঁতার। সাঁতার শেষ হয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতে।

এর আগে রাসেল এ বছর থাইল্যান্ডের ফুকেটে অনুষ্ঠিত ওশেনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন। রাসেল বলেন, সাঁতার নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি আছে। সেটি দূর করতে কাজ করবেন তিনি। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলের ট্রেনার।

এবার এই সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’। আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২৩’। সহযোগিতায় আছে ভিসাথিং, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, সরকার অ্যাগ্রো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাঁতারে অংশ নিতে গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে সাঁতারুরা দল বেঁধে অনুশীলন করেন।

আয়রনম্যানের দশম, লিপটনের রেকর্ড

দশমবারের মতো বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের আয়রনম্যান মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত। দশমবারের মতো পাড়ি দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত তিনি। আরাফাত সময় নিয়েছেন মো. মনিরুজ্জামানের চেয়ে কেবল দুই মিনিট বেশি। ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সাঁতরে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছেছেন তিনি।

আয়রনম্যান আরাফাত বলেন, ‘এবার আমার দশমবারের মতো সাঁতার ছিল এটি। সফলতা পেয়েছি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাঁতার প্রতিযোগিতা এটি। আমি প্রতিবারই অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করছি।’

এদিকে মোট ২০ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন লিপটন সরকার। ২০ বার এ বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে একক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে দুবার সাঁতরে পার হয়েছেন এই চ্যানেল। গতকাল তিনি সময় নিয়েছেন ৫ ঘণ্টা ২৬ মিনিট।

বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। তিনি বলেন, একক রেকর্ড গড়তে পেরে তিনি আনন্দিত। প্রতিবছর এত সাঁতারুর অংশগ্রহণে বোঝা যায়, বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয়। বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলা চ্যানেলে প্রতিবছর সাঁতারের আয়োজন করে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার।

ভারতীয় রচনা শর্মার প্রথম

বাংলা চ্যানেল সাঁতার শেষ করে সবার আগে উঠে আসছেন সাইফুল ইসলাম রাসেল। গতকাল সেন্ট মার্টিন সৈকতে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন ভারতীয় সাঁতারু রচনা শর্মা। প্রথমবারে ৫ ঘণ্টায় এ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। রচনা জানান, কয়েক বছর আগে তিনি বাংলা চ্যানেল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তখনই এটি পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মাঝে কোভিডের কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে এবার পাড়ি দিতে পেরে তিনি আনন্দিত।

সাঁতারে অংশ নেওয়া আরেক নারী বাংলাদেশের শোহাগী আক্তার। তিনি অবশ্য রচনার আগেই শেষ করেছেন সাঁতার। শোহাগী ৪ ঘণ্টা ২৬ মিনিটে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। তবে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া প্রতিযোগীদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন শোহাগী।

৪ ঘণ্টা ৪ মিনিটে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এবার দ্বিতীয় হয়েছেন ইলিয়াস হোসেন। তাঁর ৭ মিনিট পর সাঁতার শেষ করে তৃতীয় হয়েছেন মো. মনিরুজ্জামান। এবার ৪৩ জন সাঁতারুর মধ্যে দুজন সাঁতার শেষ করতে পারেননি। তাঁরা হলেন ফজলুল কবির সিনা ও মাহমুদুর রহমান। ছয় ঘণ্টার মতো সময় নিয়েছেন ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মোহাম্মদ তামিম পারভেজ ও মুশা আহমেদ।

বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির সিনা ও সালমান সাইদ।