প্রথম আলো : ঢাকার চিফ হিট অফিসার হিসেবে আপনার কাজ কী হবে?
বুশরা আফরিন : ঢাকায় দ্রুত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এ বছরের এপ্রিলে আমরা পুরো মাসজুড়ে এখানে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখেছি। এ ধরনের পরিস্থিতি শহরবাসীর জন্য কষ্ট তো বটেই, নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। আমি ওই ঝুঁকি কমানোর জন্য নেচার বেইজড সলিউশন বা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের চেষ্টা করব; কাজ করব সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। এই মে মাস থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে উষ্ণ দ্বীপ (হিট আইল্যান্ড) এলাকাগুলো চিহ্নিত করব। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে আমাদের গবেষণা ও জ্ঞানগত সহায়তা দেবে।
আমরা প্রাথমিকভাবে উষ্ণ দ্বীপ এলাকাগুলোর অধিবাসীদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা দিয়ে সচেতন করব। কবে ও শহরের কোন এলাকা দিয়ে কত মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে তার আগাম পূর্বাভাস আমরা মোবাইল ফোনে পৌঁছে দেব। তাপপ্রবাহের সময় তারা কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে যাবে, বেশি উষ্ণ পরিস্থিতিতে তারা কী করবে? বিশেষ করে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে কী ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেতনতামূলক তথ্য দেব। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করা উচিত সেই পরামর্শ দেওয়া হবে।
প্রথম আলো : শুধু তথ্য আর পরামর্শ দিয়ে কী অতি উষ্ণতার সমস্যার সমাধান করা যাবে? যেখানে শহরের অধিবাসীদের বড় অংশ বস্তিতে থাকে, আয় কম। আর এখানে তো রাস্তায় গাছপালা ও খাওয়ার পানির ব্যবস্থাও কম।
বুশরা আফরিন : হ্যাঁ, এটা ঠিক। শুধু তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব না। এ জন্য পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো দরকার। এ ব্যাপারেও আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের মাধ্যমে বেশ কিছু কার্যক্রম নেওয়ার কথা বলছি। যেমন এরই মধ্যে তাঁরা দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ওই গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখা ও বড় করার জন্য স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। তাপমাত্রা কমানোর কাজে মানুষের অংশগ্রহণ চাই। তাঁদের সংগঠিত করব। শহরের তাপপ্রবণ এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির কল স্থাপনের চেষ্টা করব। এ জন্য ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এ কাজে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করব।
প্রথম আলো : আপনার বাবা তো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আপনার এই পদে যুক্ত হওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
বুশরা আফরিন : আমার বাবা মেয়র এটা আমার জন্য কোনো অযোগ্যতা না। কারণ আমি মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই দায়িত্বে নিয়োগ পেয়েছি। তাঁরা আমার ইন্টারভিউ নিয়েছেন। আমি কানাডায় পড়াশোনা করার সময় থেকে পরিবেশ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক কারখানায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মপরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করেছি। আমার ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় তাঁরা জানতেন না যে আমি মেয়রের মেয়ে। আমার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও এ বিষয়ে পরিকল্পনার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই তাঁরা আমাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে কাজগুলো হলেও আমি সেখান থেকে কোনো সম্মানী নেব না। আমার সম্মানী আসবে আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। বেসরকারি সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি মূলত কাজ করব। সিটি করপোরেশন থেকে আমি কোনো কার্যালয় বা গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেব না। আমার নিজের বনানী অফিস থেকে আমার কাজগুলো করব।
প্রথম আলো : আপনি তো পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আর চিফ হিট অফিসারের কাজটি তো সার্বক্ষণিক।
বুশরা আফরিন : আমি আমাদের সামনের দিনের পুরো সময় চিফ হিট অফিসারের কাজটি করব। আমার কাজটি মূলত পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের কাজ সমন্বয় করা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে তহবিল জোগাড় করার জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হবে। আমার দুই বছরের একটি সন্তান আছে। আমি জানি এই দায়িত্ব নেওয়ার কারণে পরিবারকেও আমি আগের মতো সময় দিতে পারব না। তবে আমার পরিবার এ ব্যাপারে আমাকে অনেক সহায়তা করছে। আমি মনে করি আমার বাবা মেয়র হওয়াতে আমার কাজের জন্য অনেক সুবিধা হবে। অনেক কাজ দ্রুত সমন্বয় করা যাবে। আর বাবা মেয়র নির্বাচনে দাঁড়ানোর সময় তাঁর নির্বাচনী প্রচারে আমি কাজ করেছি। সেখানে আমরা সবুজ ঢাকা ও বাসযোগ্য শহর গড়ার জন্য অঙ্গীকার করেছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করব।