ফ্ল্যাট দান করবেন কীভাবে

প্রতীকী ছবি

অনেকেই মনে করেন ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট দান করা যায় না। এ ধারণা ঠিক নয়। ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির মতোই একটি স্থাবর সম্পত্তি। এগুলো যেমন বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়, তেমনি দানও করা যায়। মুসলিম আইনে এ দানকে হেবা বলা হয়। হেবা করতে হয় নিকটাত্মীয়কে। নিজের নামে কেনা ফ্ল্যাট যেকোনো অবস্থাতেই দান বা হেবা করা যায়। দান করতে হলে দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও সম্মতি থাকতে হয়। তবে এ জন্য মানতে হবে বিধিবিধান। নিয়ম না মেনে দান সম্পূর্ণ হয় না। দান বা হেবা করতে ত্রুটি থাকলে তা ভবিষ্যতে বড় ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।

দান বা হেবা করতে হবে কীভাবে

হেবা করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেও এ শর্তগুলো প্রযোজ্য। প্রথমত, হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও এই ঘোষণা দেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গৃহীত হতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত হচ্ছে হেবাকৃত সম্পত্তির দখল গ্রহণ অর্থাৎ যাকে দান করা হলো তার কর্তৃক সম্পত্তির দখল নেওয়া। হেবা কিংবা দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক। হেবা করা দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। দাদা-দাদি, মা-বাবা, ছেলে–মেয়ে, নাতি-নাতনি, আপন ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীকে হেবা করা যাবে। মনে রাখতে হবে যে হেবা করা সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। এ তিন শর্ত পূরণ না করলে হেবা বা দান পূর্নাঙ্গ হয় না।

অনেকে আছেন নিজের নাবালক ছেলেমেয়ের নামে ফ্ল্যাট দান করতে চান। নাবালক সন্তানদেরও দান করা যায়, তবে এটা কার্যকর হবে নাবালক সন্তান সাবালক হওয়ার পর। অনেকের শুধু কন্যাসন্তান থাকে। তারা কন্যা বা কন্যাদেরকে ফ্ল্যাট হেবা করতে চান। সে ক্ষেত্রেও হেবা করা যাবে। কন্যাসন্তান সাবালক হলে এই হেবা কার্যকর হবে এবং ফ্ল্যাটের দখলও তাঁর হবে। ফ্ল্যাটের দখল কন্যাসন্তানদের হবে মানে, ফ্ল্যাটের দলিল তথা মিউটেশন, খাজনা ও যাবতীয় বিল মেয়েদের নামে হবে। মা–বাবা চাইলে কন্যাদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। এতে কোনো জটিলতা নেই। দান বা হেবাসূত্রে যিনি নতুন মালিক হবেন, তিনি তাঁর ফ্ল্যাট অন্যের কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন কিংবা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। দিতে পারবেন ভাড়াও। আসল কথা হচ্ছে যাঁকে দান করা হলো তিনি হবেন মালিক এবং একজন মালিকের যা যা অধিকার থাকে, তাঁরও সে অধিকারগুলো থাকবে। দান বা হেবা করতে হয় নিঃশর্তে। যিনি দান করবেন তাঁর কোনো শর্ত এখানে প্রযোজ্য হবে না।

রাজউকের অনুমতি

রাজউক
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা নগরীর ভেতরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের আওতায় কোনো ফ্ল্যাট হলে তা হেবা বা দান করতে হলে প্রথমেই রাজউক থেকে অনুমতি নিতে হবে। রাজউকের অনুমতি না নিয়ে ফ্ল্যাট দান করা যায় না। এই অনুমতির জন্য রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে কাকে দান করা হচ্ছে, সে মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। এর সঙ্গে রাজউকের নকশা ও নামজারির অনুমোদনপত্র দিতে হবে। যদি ডেভেলপারের কাছ থেকে কেনা হয়ে থাকে, তাহলে সেই সাফকবলা দলিলের কপি জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পর রাজউক ফ্ল্যাট দাতাকে শুনানির জন্য নোটিশ দেবে।

শুনানির পর যদি অনুমতির জন্য বিবেচনা করা হয় তাহলে রাজউক নির্ধারিত ফি জমা দিতে চিঠি দেবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। পরে রাজউক চূড়ান্ত অনুমতি প্রদান করবে। এর পাশাপাশি রাজউক থেকে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিস বরাবর পাঠানো হবে এবং একটি কপি দাতাকে প্রদান করা হবে। রাজউকের এই অনুমোদন শুধু হেবার ক্ষেত্রে নয়, বিক্রয়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

রেজিস্ট্রেশন

প্রতীকী ছবি

ফ্ল্যাট হেবা বা দান করতে হলে অবশ্যই লিখিত হেবা নামা বা ‘দান দলিল’ সম্পাদন করতে হবে এবং তা রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। রাজউকের আওতাধীন হলে রাজউকের অনুমোদনের পর হেবা বা দানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী হেবা দলিল তৈরি করে নিতে হবে এবং দলিল সম্পন্ন করে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে অন্যান্য দলিলের মতো রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। এ জন্য দাতা ও গ্রহীতাকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। সাধারণত দাদা-দাদি, মা-বাবা, ছেলে–মেয়ে, নাতি-নাতনি, আপন ভাই-বোন, স্বামী স্ত্রীকে হেবা করার জন্য প্রতিটি হেবা দলিলের জন্য নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। তবে তাদের বাইরে কাউকে দান করতে হলে ‘হেবা বিল এওয়াজ’ বা পারস্পরিক কিছুর বিনিময়ে দানপত্র করার নিয়ম আছে। সে ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি আলাদা।

তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী