‘দুরুস কুরা’ রেঁধে প্রথম ফারজানা

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো আয়োজিত পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় রান্না করতে ব্যস্ত অংশগ্রহণকারীরা। আজ বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: সৌরভ দাশ

টেবিলে সাজানো হরেক রকম সবজি। আছে কয়েক রকমের শুঁটকি। মসলাপাতিরও অভাব নেই যেন। ফ্রিজে রাখা ইলিশ, শোল থেকে শুরু করে গরু কিংবা আস্ত মুরগি। বিচারকেরা ‘রেডি’ বলামাত্রই শুরু হলো রাঁধুনিদের দৌড়। যে যাঁর রেসিপি অনুযায়ী ঝুড়িতে তুলে নেন রান্নার উপকরণ। এরপর শুরু হয় ৫০ মিনিটে রান্নার ‘পরীক্ষা’।

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো ‘পাক্কা রাঁধুনি’ প্রতিযোগিতার ‘রান্না-পর্বে’ এ চিত্রটাই দেখা গেল আজ বৃহস্পতিবার। চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ‘দুরুস কুরা’ বা আস্ত মুরগি রান্না করে প্রথম পুরস্কার জিতে নেন রাঁধুনি ফারজানা আক্তার। তাঁর থিম ছিল ‘দুরুস কুরায় গরবা সমাদর’ অর্থাৎ আস্ত মুরগির রোস্টে অতিথি আপ্যায়ন। স্বাদে, ঘ্রাণে বিচারকদের মন জয় করায় সর্বোচ্চ নম্বর তুলে নেন তিনি। পুরস্কার পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে এই রাঁধুনি বলেন, দুরুস কুরা বা আস্ত মুরগি রান্না করে চট্টগ্রামে মেহমানদের আতিথেয়তা করা হয়। সেই ঐতিহ্যই তিনি রান্নায় তুলে ধরেছেন। পুরস্কার পেয়ে দারুণ খুশি।

বন্দরনগর চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো রান্নার এত বড় আয়োজন হলো। এতে অংশ নিতে কয়েক শ রাঁধুনি আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ৮০ জনকে মনোনীত করা হয়। এরপর রেসিপি দেখে ৩৪ জনকে দ্বিতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরে সেখান থেকে ১০ জন রন্ধনশিল্পীকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করেন বিচারকেরা। গতকাল চূড়ান্ত পর্বে ছুরি শুঁটকি, আলু ও বেগুন রান্না করে প্রথম রানারআপ হন উৎস দাশ। আর পাঁচমিশালি সবজির নিরামিষ লাবড়া তৈরি করে দ্বিতীয় রানারআপ হন শেখ রওনাজ রিংকি। বিচারক হিসেবে ছিলেন রন্ধনবিদ জোবাইদা আশরাফ, সাবিনা ইকরাম সিরাজী, র‌্যাডিসন ব্লু বে ভিউর জ্যেষ্ঠ সু শেফ শেখ খোরশেদ আলম ও পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা। বিজয়ীদের নগদ টাকা ও উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো আয়োজিত পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন চট্টগ্রামের ব্যান্ড টিম বৃষ্টির সদস্যরা। আজ সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি-সৌরভ দাশ

বিকেল চারটায় প্রতিযোগিতা শুরু হতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ১০ জন প্রতিযোগী। পেঁয়াজ, মরিচ, মাংস, মাছ আগে থেকেই কেটে রাখা ছিল। প্রতিযোগীরা টেবিলে বসানো চুলায় হাঁড়ি চাপিয়ে যে যাঁর রেসিপি অনুযায়ী রান্নায় মশগুল হয়ে পড়েন। এ সময় বিচিত্র রান্নার ঘ্রাণে ভরে উঠেছিল মিলনায়তন। ৫০ মিনিট অপেক্ষার পর বিচারকেরা একে একে ডেকে নেন প্রতিযোগীদের। এরপর চলে চুলচেরা বিচারপর্ব। চারজন বিচারক প্রতিটি পদ খুব মনোযোগ দিয়ে চেখে দেখেন।

রান্না ও বিচারকাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার পর্ব। এই পর্বে গান ও কথামালায় মেতে ওঠেন অতিথি ও দর্শকেরা। তবে প্রতিযোগীদের সঙ্গে দর্শকেরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন পাক্কা রাঁধুনির মুকুট কার মাথায় উঠছে, তা জানার জন্য। তবে এই অপেক্ষার পর্ব মধুর করতেই মঞ্চে হাজির হয় সংগীত দল ‘টিম বৃষ্টি’। তাদের গানের পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় আলোচনা পর্ব।

প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক সেলিম রেজার সঞ্চালনায় এই পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, রান্নার মাধ্যমে কোনো অঞ্চলের ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। আবার এটির ব্যবসায়িক দিকও আছে। ফলে ঘরে ঘরে থাকা রন্ধনশিল্পীদের প্রতিভা উন্মোচন করতে প্রথম আলো ও কনফিডেন্স সল্ট এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে লেডিস ক্লাবের চেয়ারম্যান খালেদা আওয়াল বলেন, ব্যবসায়ী খাতে নারী রন্ধনশিল্পীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে এলে রন্ধনশিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে। প্রথম আলো ও কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেড চট্টগ্রামে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করেছে। তাদের সাধুবাদ।

কনফিডেন্স সল্ট-প্রথম আলো আয়োজিত পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
ছবি: সৌরভ দাশ

অতিথির বক্তব্যে কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের পরিচালক কানিজ ফাতেমা বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ঘর থেকে প্রতিভাবান রন্ধনশিল্পীদের বের করে আনতে প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ আয়োজন করেছে কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেড। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে কনফিডেন্স সল্ট ও প্রথম আলোর ভিন্ন যাত্রা শুরু হলো। ভবিষ্যতে বিভিন্ন জেলায় আরও বড় পরিসরে আয়োজন হবে। কানিজ ফাতেমা আরও বলেন, রান্নাবান্না এখন শুধু মেয়েদের মধ্যেই আটকে নেই। এখন সবাই এ শিল্পে এগিয়ে আসছে। এই ১০ প্রতিযোগী নানা ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্তপর্বে এসেছেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে তাঁদের অনুপ্রাণিত করা হলো। এটি সামনে এগিয়ে যাওয়ার রসদ হিসেবে কাজ করবে।

চট্টগ্রামে আবার এ ধরনের রান্নার প্রতিযোগিতা হবে বলে দর্শকদের আশ্বাস দেন কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সরদার নওশাদ ইমতিয়াজ। তিনি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো পাক্কা রাঁধুনি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। প্রথমবারই ভোজনরসিক ও রন্ধনশিল্পীদের বেশ ভালো সাড়া মিলেছে। চূড়ান্তপর্বে অংশ নেওয়া রাঁধুনিরা অল্প সময়ে মুখরোচক সব পদ তৈরি করেছেন। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি পদও রান্না হয়েছে। বিচারকেরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তিনজনকে বেছে নিয়েছেন। ভবিষ্যতেও এমন সৃজনশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।