বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক শফিউর রহমান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘পরোক্ষ হয়রানির’ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)’ গতকাল বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সিপিজে বলেছে, গত ১৭ মে কক্সবাজার থেকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৩২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেন পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সদস্যরা। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও পরামর্শকদের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক ‘এপিএনওআর (এশিয়া–প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক)’–এর সঙ্গে অননুমোদিত বৈঠক করেন তাঁরা।
আটক রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাইকে শফিউর রহমানের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। শফিউর একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। শফিউর ও আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সিপিজেকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নীতি রোহিঙ্গাদের ওপর কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন করেছেন শফিউর। এপিএনওআরের বৈঠক থেকে আটক করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকজনকে শফিউরের ছবি দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা তাঁকে চেনেন কি না।
আটক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও পরামর্শকদের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক ‘এপিএনওআর (এশিয়া-প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক)’–এর সঙ্গে অননুমোদিত বৈঠক করেন তাঁরা।
সিপিজেকে একাধিক সূত্র বলেছে, বৈঠকে অংশ নেওয়া আটক রোহিঙ্গাদের মুঠোফোন ও ল্যাপটপ থেকে পাসওয়ার্ড সরিয়ে ফেলারও নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। মুঠোফোন ও ল্যাপটপগুলো ২৫ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে ছিল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, তাঁরা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে শফিউর রহমান সিপিজেকে বলেছেন, তিনি এপিএনওআরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিকতম ওই ঘটনা নিজের নিরাপত্তা ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে তাঁর কাজ করার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করেছে। আশ্রয়শিবির নিয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিকেরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও শিবিরের ভেতর থেকে হুমকি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সাংবাদিক শফিউর বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড পরোক্ষভাবে হয়রানি করার শামিল। কেননা কর্তৃপক্ষ আমাকে পরোক্ষভাবে চুপ করাতে ও ভয় দেখাতে নিজেদের প্রভাব খাটাচ্ছে। সেই সঙ্গে তরুণদের (আটক রোহিঙ্গা) ভয় দেখাচ্ছে; যদিও আমার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
রোহিঙ্গা সাংবাদিকেরা সিপিজে ও অন্যান্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ করেন, দায়িত্ব পালন করার কারণে প্রতিশোধ হিসেবে তাঁদের ওপর নজরদারি ও হয়রানি করছে এবং হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত সিপিজেকে বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি কিছু জানাননি।
অন্যদিকে এনএসআইয়ের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদ হাছানকে সিপিজের বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করার আহ্বান জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।