বাল্যবিবাহে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় আছে বাংলাদেশ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

‘রোড টু রিকগনিশন: আ ফার্স্ট স্টেপ টুয়ার্ডস জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বরছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মেয়েদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় নিচে আছে। আফ্রিকার দেশগুলোও এর চেয়ে অনেক ভালো। আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে, সম্পত্তি, অধিকারের ক্ষেত্রে—সবকিছুতে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে।

‘রোড টু রিকগনিশন: আ ফার্স্ট স্টেপ টুয়ার্ডস জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

সামাজিক নানা সূচকে ভালো করলেও কিছু সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এই যে এতগুলো সামাজিক সূচকে আমরা এত ভালো করলাম। কিন্তু আমরা সবচেয়ে খারাপ কোথায় করেছি? আমাদের সমতুল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বাল্যবিবাহে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় আছে। সবচেয়ে বেশি।’

বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধের তথ্য উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ নারী গণপরিবহনে কোনো না কোনোভাবে কটূক্তি বা অপমানের শিকার হন।

তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক সূচকগুলোতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, উন্নয়নগুলোতে একটা প্রচণ্ড বৈপরীত্য আছে। বাংলাদেশ খুব গর্ব করে বলে, দেশে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কমেছে। মাতৃমৃত্যুর হারও এখন কমছে। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। গড় আয়ু প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এসব সম্ভব হয়েছে নারী কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেছেন বলে।

নারীদের কর্মক্ষেত্রে সন্তানকে নিয়ে আসার সুযোগ রাখার পাশাপাশি বাচ্চাদের পরিচর্যার জন্য দিবা–যত্ন কেন্দ্র (ডে–কেয়ার সেন্টার) করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকগুলো জেলায় নারী জেলা প্রশাসক, নারী পুলিশ সুপাররা পুরুষ জেলা প্রশাসকদের চেয়ে বেশি সক্ষমতা দেখাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, নারীদের নেগোশিয়েট (সমঝোতা করা) করার সক্ষমতা ভালো। আর কোনো কিছু জোর করে আদায় করে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরা ভালো করছেন।

জেন–জি প্রজন্মের তরুণদের নারীদের প্রতি সম্মান ও মূল্যবোধের জায়গা বাড়ানোর দরকার বলে মনে করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দরকার। রাস্তাঘাটে চলাফেরার ক্ষেত্রে, যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীরা যাতে কোনো অসম্মানের শিকার না হন—সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

‘অবৈতনিক কাজের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা’

অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপপরিচালক আসমা আখতার। বিবিএসের হাউসহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (এইচপিএসএ) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গৃহস্থালি অবৈতনিক কাজের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৯ শতাংশের সমান। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ অবদান নারীদের, জিডিপির হিসাবে যা ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশের সমান। ১৫ বছরের বেশি বয়সী ১৭ হাজার ৭০০ জনের তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব পাওয়া গেছে।

নিবন্ধের তথ্য তুলে ধরে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে অবৈতনিক কাজ (আনপেইড ওয়ার্ক) বেশি হয়। বাংলাদেশে অবৈতনিক কাজের পরিমাণ জিডিপির হিসাবে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ। আর পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভুটানে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপির জোগান আসে এ খাত থেকে।

আরও পড়ুন

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, যেখানে নারীরা ঘরে সম্মানিত হবেন এবং পারিবারিক সহিংসতার সম্মুখীন হবেন না। অবৈতনিক গৃহস্থালির কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া ছিল সেই স্বপ্নের মূল বিষয়। আজ সরকার কর্তৃক এই স্বীকৃতি, নারীর অধিকার অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রামসের পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, আয়াত ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নুসরাত আমান, এডিবির প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নাসীবা সেলিম, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ, ইউএন ওমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং, কানাডিয়ান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেভেলপমেন্ট-জেন্ডার ইকুয়ালিটি) স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড, নাগরিকতা সিইএফের ডেপুটি টিম লিডার ক্যাথারিনা কুনিগ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন পরভীন মাহমুদ।

আরও পড়ুন