গ্রামীণ সড়কের বড় অংশই বেহাল

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে সংস্কারের অভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ সড়ক একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ সড়কেরই মেরামত প্রয়োজন

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের রাধানগর থেকে মানিকপুর সড়কের এমনই চিত্র। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোও এখনো মেরামত করা হয়নি। সম্প্রতি তোলাছবি : প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর-হরষপুর সড়কটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সড়কটি সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কটির একাংশের নতুন পিচঢালাই করা জায়গা থেকে বিটুমিন ও পাথর উঠে যায়। গত ডিসেম্বর থেকে সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। সড়কটির দুরবস্থার কারণে এ পথে চলাচলকারীদের দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

একই অবস্থা ঝিনাইদহ সদরের ঝিনাইদহ-নারিকেলবাড়িয়া সড়ক এবং ঝিনাইদহ-হরিশংকরপুর সড়ক দুটির। সড়কের অনেক স্থান ভেঙেচুরে গেছে। জেলার মহেশপুরের কালীগঞ্জের লাউতলা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কটিরও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

শুধু এই সড়কগুলো নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন দেশের গ্রামীণ সড়কের একটা বড় অংশই বেহাল। এর মধ্যে সংস্কারের অভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ সড়ক একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সংস্থার অধীনে থাকা প্রায় ৫০ শতাংশ সড়কেরই মেরামত প্রয়োজন। এলজিইডির সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ শাখা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের জাতীয় সড়ক ব্যবস্থার শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কের একক দায়িত্ব এলজিইডির। এলজিইডির আওতাধীন গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন-রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সংস্থাটির। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ক এলজিইডির। সংস্থাটির আওতায় মোট ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯২১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ পাকা ও ৫৫ শতাংশ কাঁচা সড়ক। এলজিইডি সূত্র বলছে, সংস্থাটি সচরাচর কাঁচা সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ বরাদ্দ দেয় না। এ কারণে বছরের পর বছর এই সড়কগুলো ভাঙাচোরা থাকে।

আরও পড়ুন

এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এলজিইডির সড়ক নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত হয়েছে। সংস্থার যে বরাদ্দ থাকে, তাতে ৫০ শতাংশ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কাঁচা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না। গ্রাম সড়ক উন্নয়নের (‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণি) জন্য একটি আলাদা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, বিগত তিন অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে রাজস্ব খাত থেকে সংস্থাটি ব্যয় করেছে প্রায় ৬ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সংস্থাটি।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট বরাদ্দে কাটছাঁট করার মানসিকতা বদলাতে হবে। একটি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে অনেক বছর টেকে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পুরো সড়ক নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতি বাড়ায়
কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, সহকারী অধ্যাপক, এআরআই, বুয়েট

সাধারণত, সড়ক নির্মাণের পাঁচ বছরের মধ্যে তা সংস্কার করা হয় না বলে এলজিইডি সূত্র জানায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নির্মাণের পর বছর না ঘুরতেই সড়ক ভাঙতে শুরু করে। তা ছাড়া এলজিইডির সড়ক নির্মাণের পর তা বেশি দিন না টেকার অভিযোগ রয়েছে। দু-তিন বছরের মধ্যেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। এ কারণে বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের সুফল মানুষ পায় না।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দুটি বৈঠকে গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে গ্রামীণ রাস্তার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সরকারি ও বিরোধী দলের চারজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে একজন বলেন, বেহাল রাস্তার কারণে সংসদ সদস্যদের কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নস্তি-উজ্জ্বলপুর সড়কটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একই উপজেলার সস্তার বাজার থেকে পান্তাপাড়া পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল।

এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, গ্রামীণ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল। উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন সড়কে ৮ দশমিক ২ টন এবং গ্রামীণ সড়কে ৫ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল করে। এ কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়। এ ছাড়া অতিবৃষ্টি, সড়কের পাশের পুকুরের পাড় বাঁধানো না থাকা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও সড়কের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এলজিইডির সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও দুর্নীতিকেও দায়ী করেন।

গ্রামীণ কাঁচা সড়ক অবহেলিত

এলজিইডির অধীন থাকা গ্রামীণ সড়ককে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক, গ্রাম সড়ক (ক শ্রেণি) ও গ্রাম সড়ক (খ শ্রেণি)।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে চার ধরনের কাজ করে। এগুলো হলো যেসব সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ভরাট (রি-সিল), মোটামুটি থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত (ওভার-লে), সড়কের আয়ুষ্কাল কমে গেলে তা পুনর্বাসন এবং সড়ক প্রশস্ত করা। তবে সংস্থাটির সড়ক রক্ষণাবেক্ষণকাজের বড় অংশ অর্থই ব্যয় হয় মেরামতের পেছনে।

এলজিইডি প্রতিবছর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে। এলজিইডি সূত্র বলছে, যে সড়কে যানবাহন চলাচল বেশি, উপজেলা ও ইউনিয়নের সংযোগকারী সড়ক, হাটবাজারের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে—এমন সব সড়কই সংস্থাটি গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করে।

প্রতিবছর যে পরিমাণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, চাহিদা থাকে তার দ্বিগুণ। প্রতিবছর বরাদ্দের প্রায় ৭৫ শতাংশই উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দেওয়া হয়। গ্রামীণ সড়ক বেশি হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়।
এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসীন

এলজিইডি থেকে জানা যায়, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক বাদে সংস্থাটির ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারের বেশি গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা সড়ক ১ লাখ ৭৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি। অর্থাৎ, মোট গ্রামীণ সড়কের ৬৭ শতাংশই কাঁচা।

কাঁচা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে এলজিইডি সচরাচর অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় তা বছরের পর বছর ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকে।

এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর যে পরিমাণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, চাহিদা থাকে তার দ্বিগুণ। প্রতিবছর বরাদ্দের প্রায় ৭৫ শতাংশই উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দেওয়া হয়। গ্রামীণ সড়ক বেশি হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়।

এলজিইডির প্রকৌশলী, সড়ক বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক অগুরুত্বপূর্ণ সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়। কিন্তু জরুরি হলেও অনেক গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয় না। আবার সড়কে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এলজিইডির একটি বেহাল সড়ক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দগিরাসার এলাকায়
ছবি: শাহাদৎ হোসেন

বেহাল সড়কে চলাচলে কষ্ট

এলজিইডির অধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর-হরষপুর সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। গত সপ্তাহে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়। জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কটির দুরবস্থার কারণে এ পথে চলাচলকারী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক সংস্কারের জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের অক্টোবরের মধ্যে সড়কটির সংস্কারকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কটির মির্জাপুর থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত নতুন পিচঢালাই করা অংশের অনেক জায়গা থেকে বিটুমিন ও পাথর উঠে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়। এ কারণে উপজেলার মির্জাপুর থেকে বাগদিয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের সংস্কার শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটির মির্জাপুর থেকে বাগদিয়া পর্যন্ত কার্পেটিং করা হয়েছিল। আর বাগদিয়া থেকে দেওয়ানবাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশে ইটের সুরকি ফেলে রাখা হয়েছে। এই অংশের রাস্তা দিয়ে ধুলা ওড়ে। এ কারণে লোকজনের চলাচল করা কঠিন।

এলজিইডির বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশিকুর রহমান ভূঁইয়া ১১ মে প্রথম আলোকে বলেন, মির্জাপুর-হরষপুর সড়কের কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ সড়কের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নস্তি-উজ্জ্বলপুর সড়কটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একই উপজেলার সস্তার বাজার থেকে পান্তাপাড়া পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল।

৩০০০
এলজিইডি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। বিগত তিন অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে রাজস্ব খাত থেকে সংস্থাটি ব্যয় করেছে প্রায় ৬ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

ঝিনাইদহ সদরের ঝিনাইদহ-নারিকেলবাড়িয়া সড়ক এবং ঝিনাইদহ-হরিশংকরপুর সড়ক দুটির অনেক স্থান ভেঙে গেছে। কালীগঞ্জের লাউতলা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কটির সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল থেকে ঘণ্টেশ্বর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে ভোগান্তি

গত বছরের বন্যায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয় এলজিইডির সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংস্থাটি সূত্রে জানা গেছে।

এলজিইডির সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় সংস্থাটির অধীন সড়ক আছে ৪ হাজার ৫৭১ কিলোমিটার। বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় দেড় হাজার কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়।

বন্যায় নেত্রকোনায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল বলে এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়। বন্যায় পানির স্রোতে জেলার কোনো কোনো সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে যায়। কোথাও কোথাও বড় গর্ত তৈরি হয়।

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছর সংস্থার বাজেটে সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ থাকে। অনেক সময় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে একাধিক জেলার সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের জন্যও একটি আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এলজিইডির কর্মকর্তারা নানা চাপে থাকেন। ফলে সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা অনেক ক্ষেত্রে নিতে পারেন না। স্থানীয় পর্যায়ে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি বলেন, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট বরাদ্দে কাটছাঁট করার মানসিকতা বদলাতে হবে। একটি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে অনেক বছর টেকে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পুরো সড়ক নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতি বাড়ায়।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন শাহাদৎ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আজাদ রহমান, ঝিনাইদহ, খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ ও পল্লব চক্রবর্তী, নেত্রকোনা)।