জয়নুলের লড়াই-অর্জন ছিল পূর্ব বাংলার মানুষকে ঘিরে
জয়নুল আবেদিনের তুলি নিজের জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরতে চেয়েছে। তাঁর লড়াই এবং অর্জন পূর্ব বাংলার মানুষকে নিয়ে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় উঠে এল এসব কথা।
বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনারকক্ষে আজ সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় ‘জয়নুল আবেদিনের চিত্রকলায় মানুষ ও সমাজচেতনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার।
অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বুর্জোয়া রাজনীতির কর্তৃত্ব কৃষক শ্রেণিকে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। নিজের তুলি দিয়ে সেটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন জয়নুল।’
আবদুস সাত্তার আরও বলেন, ‘মন্বন্তরের ছবি ভারতবর্ষের আরও অনেক বিশিষ্ট শিল্পী এঁকেছিলেন। কিন্তু কারও কাজই ঠিক সেখানে পৌঁছাতে পারেনি, যা জয়নুলের ছবি পেরেছিল।’
প্রবন্ধের ওপর আলোচনার সূত্রে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নানামাত্রায় ব্যাখ্যা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার। তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী তাঁর ব্যক্তিগত সাধনা দিয়ে গোটা জনগোষ্ঠীর শিল্পী হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মন্বন্তরের সঙ্গে লড়াই আর স্বাধিকার, স্বাধীনতার সংগ্রামে উদ্বেলিত জাতির প্রতিটি পর্ব জয়নুলের সৃষ্টিতে নতুন মাত্রা লাভ করেছে।’
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী বলেন, ‘জয়নুল আবেদিন ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের শিল্পী।’
প্রবন্ধের সূত্র ধরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা কিছু ছবির সন–তারিখ ভুল থাকার কথা জানান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘শিল্পীর যা বেসিক জয়নুল সেই শক্তিতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এক বছর পর যে বৃত্তি পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি আগেই পেয়েছিলেন নিজের সেই তুলির জোরে। যা ছিল তাঁর ভেতরের শক্তি। এই শক্তি তিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতি করার জন্য ব্যবহার করেননি।’
সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘জয়নুলের দৃষ্টি ছিল ব্রহ্মপুত্র, নদী, বাড়ি, মানুষের দিকে। শক্তিটা সেখানেই তিনি ব্যবহার করেছিলেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, ‘জয়নুল আবেদিনের চিত্রগুচ্ছে মন্বন্তর ও জনবিপন্নতা ধারণ করে তিনি দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে প্রশ্ন আসে সমসাময়িক অন্য শিল্পীদের চিত্রে সেসব বিষয় কতটা গভীরভাবে এসেছে।’
মোহাম্মদ আজম বলেন, ইউরোপীয় শিল্প-আধুনিকতা দিয়ে জয়নুল-চিত্রকলাকে যেমন ব্যাখ্যা করা যাবে না, তেমনি কলকাতার শিল্প-স্কুল দিয়েও হুবহু অনুধাবন করা যাবে না তাঁকে। জয়নুলের লড়াই ও অর্জন পূর্ব বাংলার জনমানুষকে ঘিরেই মূলত আবর্তিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।