গণতন্ত্র এখন বিশ্বের অনেক দেশেই চ্যালেঞ্জের মুখে: মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী

‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের’ উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ বক্তৃতায় মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাউসা মারা। ঢাকা, ৭ অক্টোবর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিশ্বের অনেক দেশেই গণতন্ত্র এখন চ্যালেঞ্জের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাউসা মারা। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাগর এবং আকাশসীমার পাশাপাশি মহাকাশেও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তাদের এই দ্বৈরথ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তাই ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই পরাশক্তির এই প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভারসাম্যকে বিবেচনায় নিতে হবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ শনিবার সকালে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের’ উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ বক্তৃতায় মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং নির্বাহী পরিচালক ও বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের চেয়ার জিল্লুর রহমান।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাকালে দেখি, এখন শক্তিশালী দেশের উদ্ভব হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশীর ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে, নানা ধরনের সংস্থা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে প্রভাব খাটায়। ন্যাটো, জি-২০ এবং ব্রিকস এসব প্রভাবের উদাহরণ। তাদের মধ্যে বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। যে প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক—সব পরিমণ্ডলে।’ তাঁর মতে, ইউরোপ মহাদেশ ধনী হলেও সেখানকার দেশগুলোর মাঝে বিভাজন আছে। এই বিভাজনের কারণে ইউরোপের শক্তিক্ষয় ঘটছে। ফলে শক্তির ভরকেন্দ্র এখন ন্যাটোকে ঘিরে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিভাজনের ফলে মাঝারি শক্তির কিছু দেশের নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হচ্ছে। এসব দেশের তালিকায় আছে সৌদি আরব, তুরস্ক, জাপান, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া।

মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এতে কোনো দেশই জয়ী হতে পারবে না। কারণ, রাশিয়ার যেমন বিপুল সম্পদ নেই, তেমনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভ করার মতো পর্যাপ্ত সমরাস্ত্র ইউক্রেনের নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া রাষ্ট্র হিসেবে দুর্বল হয়ে পড়বে।

মাউসা মারা বলেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্তে গণতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটছে। গণতন্ত্র আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমরা জাতীয়তাবাদ এবং উগ্রবাদের উত্থান লক্ষ করছি। এতে গণতান্ত্রিক মূলবোধ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। অনেক দেশে গণতন্ত্রকে শাসন প্রক্রিয়ার যথাযথ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। আফ্রিকা মহাদেশে প্রতিনিয়ত নির্বাচিত এবং বৈধ সরকারকে হটিয়ে সামরিক সরকার ক্ষমতায় বসে পড়ছে।’

মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর ভর করে বিশ্বের এগিয়ে চলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং নাগরিক ও মৌলিক স্বাধীনতা বিশ্বকে এগিয়ে নিয়েছে। এখন নাগরিক এবং মৌলিক এসব মূল্যবোধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।