তাজউদ্দীন ছিলেন একই সঙ্গে আদর্শবাদী ও বাস্তববাদী নেতা

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের শততম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভাছবি: প্রথম আলো

তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন আদর্শবাদী নেতা। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাস্তববাদী। আদর্শিক দিক থেকে তিনি মানুষের মুক্তির কথা ভেবেছেন। এমন মুক্তি, যেখানে মানুষ শোষণ, বঞ্চনার শিকার হবে না। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন। আর বাস্তববাদী ছিলেন বলেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়েছিলেন। তাঁর দলের ভেতরের অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।

আজ বুধবার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের শততম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সাহিত্য–সংস্কৃতির পত্রিকা কালের ধ্বনি বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য সারথী: শতবর্ষে তাজউদ্দীন আহমদ’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন এই যুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না, এটি হবে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। তবে ইন্দিরা গান্ধীর আশঙ্কা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে পশ্চিমবঙ্গ যেন পূর্ব বাংলার মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে না পড়ে। তাঁর এই সন্দেহ দূর করতে তখন স্বাধীন বাংলাদেশের যে পতাকা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে লাল বৃত্তের মধ্যে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র যুক্ত করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই সংগ্রাম শুধুই পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন অনেক কাজের মধ্য দিয়ে তাজউদ্দীন আহমদের বাস্তববাদিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

আলোচনা পর্বে অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ নেতা হতে চাননি। তিনি নেপথ্যে থেকে কাজ করতেই পছন্দ করতেন। তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী নেতা আওয়ামী লীগে ছিল না। সামগ্রিক রাজনীতিতেও দুর্লভ। সাচিবিক দায়িত্বে তিনি সুদক্ষ ছিলেন, বরাবর ভালোভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, তাজউদ্দীন আহমদের কাছে অন্তত দুটি জিনিস তরুণ প্রজন্মের শেখার আছে। ‘নোট রাখা’ ও ‘ডায়েরি লেখা’। কত যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজগুলো তিনি করেছেন, পুস্তক আকারে প্রকাশিত তাঁর ডায়েরি, চিঠিপত্র ও বক্তৃতা থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর ডায়েরিটাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অনিবার্য তাজউদ্দীন আহমদ নামে ইমরান মাহফুজের সম্পাদনায় একটি বিশেষ সংকলন প্রকাশ করা হয়।

কালের ধ্বনি সম্পাদক ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফারায়জী, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, বাপার সম্পাদক আলমগীর কবির, সাংবাদিক কাজল রশীদ, গবেষক আলমগীর খান, সংবিধানবিশেষজ্ঞ আরিফ খান ও শুভ কিবরিয়া।