ঘোড়াটা আগে বাঁধা উচিত ছিল

ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।

‘ঘোড়াটা আগে বাঁধা উচিত ছিল। তারপর গাড়ির সঙ্গে জুড়ে দিলে ভালো হতো। এখন তা না করে ঘোড়ার ছোটা বন্ধ করা যাবে না।’

ডিজেল-পেট্রল-অকটেন-কেরোসিনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে কমানোর সিদ্ধান্তের পর কথাগুলো বললেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘সিদ্ধান্তহীনতার’ একটি উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দেন।

শুল্ক কমানোর পরদিনই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করছে সরকার। গতকাল রোববার ডিজেলে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়। আজ সোমবার ডিজেল-পেট্রল-অকটেন-কেরোসিনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে কমাচ্ছে সরকার।

সরকারি এ সিদ্ধান্তের পর প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিল, তা আগে থেকেই নিতে পারত। তাতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে এর ফলে যে তীব্র প্রভাব পড়েছে, তার অনেকটাই প্রশমিত হতে পারত। কিন্তু যখন গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, মানুষের ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ—তখন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থবিরতার এটি একটি নমুনা। স্থবিরতা এবং সিদ্ধান্তহীনতারও লক্ষণ এটি।

৬ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারে ৩৪ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা ও অকটেনে ৪৬ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। এরপর সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বাড়তে থাকে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহনমালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বিআরটিএর ভাড়া নির্ধারণী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা হয়। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারপ্রতি ৪০ পয়সা, অর্থাৎ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ মহানগরগুলোয় ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। মহানগরে বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ৫০ পয়সা হয়। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়ে ৩৫ পয়সা।
ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শুল্ক কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি উঠতে থাকে। এখন সেই পথেই হাঁটল সরকার।

কিন্তু এ সিদ্ধান্তে তেমন কোনো লাভ হবে বলে মনে করেন না গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘এই যে পাঁচ টাকা করে জ্বালানি তেলের দাম কমল, তাতে কি পরিবহনের ভাড়া কমবে? সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে—তা মনে হয় না।’

জ্বালানির ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি এবং মাত্র পাঁচ টাকা করে দাম কমানোয় আসলে দুই দিকেই ক্ষতি হলো বলে মনে করেন ক্যাব চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এর ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব কমবে, আবার মানুষের দুর্ভোগও কমবে না।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়াকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সরকার। গোলাম রহমান বলেন, ‘যখন বিশ্ববাজারে দাম কম ছিল, তখন তারা দাম কমায়নি। এখন বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াকে আবার দেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। আমরা ক্যাবের পক্ষ থেকে বারবারই বলে আসছি, জ্বালানি তেল বিক্রি করে যে মুনাফা হয়, তা একটি ফান্ডে রেখে দেওয়া হোক। যখন দাম বাড়বে, তখন সেই অর্থ কাজে লাগানো হোক। এতে মানুষের ওপর অকারণ প্রভাব পড়বে না এবং অর্থনীতিও সবল থাকবে।