দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে মানুষের আশাবাদ কমছে

দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে আশাবাদ কমে যাচ্ছে। সব আয়ের মানুষের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে আশা কম। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ সমীক্ষায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সমীক্ষা সম্পর্কে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সিটিজেনস পারসেপশন সার্ভে ২০২৪ অন গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি’ শীর্ষক এ সমীক্ষা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। সমীক্ষায় দেশের ৬৪ জেলার মোট ৬ হাজার ৫১০ জন নারী ও পুরুষ অংশ নেন। প্রতি জেলা থেকে মোট ১০৬ জন করে উত্তরদাতা নির্বাচন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২২ সালেও একই ধরনের সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল।  

চলতি বছরের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশের সব আয়ের মানুষের মধ্যে অর্থনীতি সম্পর্কে আশাবাদ কমছে। অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবের সর্বোচ্চ হার দেখা গেছে সবচেয়ে নিম্ন আয়ের উত্তরদাতাদের মধ্যে। এসব মানুষের আয় ৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম। ২০১৯ সালে এই আয়ের ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছিলেন যে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে। ২০২৪ সালে এই হার উল্লেখজনকভাবে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের নন, দেশের সব আয়ভিত্তিক শ্রেণির উত্তরদাতার মধ্যেই এ ধরনের আশাবাদ কমে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে চলছে কি না—এই বিষয়ে সমীক্ষার অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক—এই তিন দিক দিয়েই ভুল পথে যাচ্ছে; যেখানে ২০১৭ সালে মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ এই ধারণা পোষণ করতেন। তাই সামগ্রিকভাবেও ২০১৭ সাল থেকে দেশের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা কমে গেছে।

অর্ধেকের বেশি উত্তরদাতা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বেকারত্ব (৮%), দুর্নীতি (৪%) এবং অর্থনৈতিক/ব্যবসায়িক মন্দার (৪%) মতো বিষয়গুলোও অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৫ ভাগ বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জীবন–জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।

গণতন্ত্র বলতে কী বোঝেন—এমন প্রশ্নে ৩৩ শতাংশ মানুষ ‘জানি না’ উত্তরটি বেছে নেন, যা ২০২২ সালের জরিপে একই ছিল। অন্যদিকে ২০ শতাংশ উত্তরদাতা সবার জন্য সমানাধিকার/ন্যায়বিচার এবং ১১ শতাংশ উত্তরদাতা জনগণের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্র হিসেবে মনে করেন। ‘সংসদ সদস্যরা জনগণের জন্য চিন্তা করেন’—এই বাক্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, তাঁরা সরকারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ককে প্রধানমন্ত্রী-নাগরিক সম্পর্ক হিসেবে দেখেন এবং ২৯ শতাংশ জানান, তাঁরা সরকারকে কল্যাণকারী পৃষ্ঠপোষক এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখেন।

এশিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণা ব্যবস্থাপক নাফিস মাহরুফ সাফাকাত প্রথম আলোকে গবেষণার এ অংশ নিয়ে বলেন, সরকারের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক নিয়ে নানা বিষয়ে মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এ সম্পর্ককে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একজন নাগরিকের সম্পর্ক যেমন, তেমন করে ভাবেন।

জরিপ অনুযায়ী, ১৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকারের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই, যেখানে ২০২২ সালে এই মনোভাব ছিল ৯ শতাংশ মানুষের। স্থানীয়ভাবে মানুষ ইউনিয়ন পরিষদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলে মনে করেন (৬৭%) এবং চেয়ারম্যান বা মেয়রকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হিসেবে চিহ্নিত করেন (৩৪%)।
জরিপে সংবাদ ও গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের ধারণা কেমন, সেটিও বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

মানুষ ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মকে বিভিন্ন খবরের উৎস হিসেবে বেশি ব্যবহার করছেন। তবে সংবাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা এই উৎস ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সংবাদ/গণমাধ্যমের (টেলিভিশন, প্রিন্ট-মিডিয়া এবং মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি) স্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে দেখা যায়, অর্ধেকের কমসংখ্যক উত্তরদাতা মনে করেন, এসব মিডিয়া পুরোপুরি স্বাধীন।