খাদ্য মজুত নিয়ে প্রস্তাবিত আইনে কী আছে

প্রতীকী ছবি

নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুতসংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‌‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

নতুন আইনটি দুটি পুরোনো আইনের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে: খাদ্য (বিশেষ আদালত) আইন, ১৯৫৬ এবং খাদ্যশস্য সরবরাহ (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯। খাদ্য মজুতবিরোধী এ রকম একটি বিধান বিশেষ ক্ষমতা আইনেও (১৯৭৪) অন্তর্ভুক্ত ছিল। খসড়া আইনে প্রধানত ধান, চাল, গম, আটা ও ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ-সংক্রান্ত অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে খাদ্যদ্রব্য মজুতের ওপর বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুতসংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সর্বোচ্চ সাজা পাবেন। অবশ্য শর্ত হিসেবে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে লাভবান হওয়ার জন্য মজুত করেননি, তাহলে তাঁর অনধিক তিন মাস কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হবে।

ফাইল ছবি
প্রথম আলো

প্রস্তাবিত আইনে উৎপাদন ও বিপণনসংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে বা খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটি অপরাধ হবে। এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সাথে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনে সরবরাহসংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, পুরাতন খাদ্যদ্রব্য পলিশিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশ্রণ করে, সরকার কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য বা সরকারি গুদামের পুরাতন বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে, এমন চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্যভর্তি বস্তা বা ব্যাগ সরকারি গুদামে সরবরাহ করাটা অপরাধ। এসব অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে হতে পারে।

বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয়সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে, এমন চিহ্নযুক্ত সিল ব্যতীত সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্যভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় করলে, তা হবে একটি অপরাধ এবং এ জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এই আইনে কর্তব্য পালনে বিরত থাকা বা কর্তব্য পালনে বাধা প্রদান নিয়ে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিলমালিক, ডিলার বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এতৎসংক্রান্ত কোনো কর্মসম্পাদনে নিজে বিরত থাকিলে বা সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাঁর কর্তব্য পালনে বিরত থাকতে বাধ্য বা প্ররোচিত করলে বা তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, তা হবে একটি অপরাধ এবং এ জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এই আইনে কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে উক্ত অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কোম্পানির প্রত্যেক প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী উক্ত অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন উক্ত অপরাধ তাঁর অজ্ঞাতসারে হয়েছে অথবা তিনি তা রোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

এই আইনের ৭ ধারাটি বেশ ‘স্পর্শকাতর’। এতে ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড’ শিরোনামে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন সম্পর্কে কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ ও বিতরণ করলে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আইনের এই ধারাটি সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।