নোয়াখালীতে বৃষ্টি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উজান থেকে এখনো ধেয়ে আসছে পানি। এতে জেলার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সড়কসহ জেলা শহর মাইজদীর প্রায় সব সড়ক হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়িতেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যার কারণে শহরের সড়কগুলোতে রিকশা, অটোরিকশার চলাচলও কম। হেঁটে পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন মানুষ।
জেলা শহর মাইজদীর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার-সংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা গৃহিণী সানজিদা আক্তার বলেন, পানির কারণে চার দিন ধরে গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন তিনি। ঘর থেকে বের হলে উঠানে প্রায় কোমরসমান পানি। ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। খাটের ওপর গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে কোনোমতে রান্নার কাজ সারছেন। তিনি আরও বলেন, আশপাশের মুদিদোকান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পানি মাড়িয়ে দূরে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটাও অসম্ভব। পানি না কমলে আগামীকাল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে।
জেলার সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা জানান, ফেনীর দিক থেকে তাঁদের এলাকায় পানি আসছে। এ কারণে বৃষ্টি কমে হলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সেনবাগ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি না হলেও আজ দুপুর নাগাদ বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার কারণে তাঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। তাঁর বাড়ির ভেতরেও হাঁটুপানি।
বন্যার পানিতে ডুবে সেনবাগে মো. মাহবুব (৬) নামের শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেব উল্লাহ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শিশু মাহবুব ওই বাড়ির সৌদিপ্রবাসী মো. সোহেলের ছেলে। কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ওরফে বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেগমগঞ্জের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মানিক বলেন, বন্যার পানিতে বসতঘরের খাট ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চার দিন ধরে ঘরে রান্না বন্ধ। দূরের দোকান থেকে শুকনা খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এর আগের ২৪ ঘণ্টার প্রায় অর্ধেক। বৃষ্টি আরও কমে আসবে বলে আশাবাদ তাঁর।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৮টি উপজেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী অবস্থায় ঘরে রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দ হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।