মাদকসেবীদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি

দেশের ৪১ জেলায় এইচআইভি সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে সংক্রমিত সব রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

দেশে এইচআইভি সংক্রমণ

  • অনুমিত সংক্রমিত ব্যক্তি ১৪,০০০

  • শনাক্ত হয়েছে ৮,৭৩২

  • সংক্রমণের হার .০১%–এর কম।

  • ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে হার ১–৪%

আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সব জেলায় এইচআইভি/এইডস পরীক্ষার সুযোগ নেই। ফলে এইচআইভি সংক্রমিত সব ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। সংক্রমিত হয়েও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এতে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এইডসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে শিরায় মাদকগ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, পুরুষ যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী পুরুষ। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এসব ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল।

এতে দেখা যায়, এই জনগোষ্ঠীর ১ থেকে ৪ শতাংশ এইচআইভি সংক্রমিত। তাদের মধ্যে শিরায় মাদকগ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া প্রায় ২ শতাংশ পুরুষ যৌনকর্মী ও সমকামীর মধ্যে সংক্রমণ দেখা গেছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ দশমিক শূন্য এক শতাংশের কম।

‘আমাদের সমাজে পুরুষ সমকামীরা নিজেদের প্রকাশ করেন না। তাই তাঁদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া কঠিন। তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে গভীর অনুসন্ধান দরকার।’
নজরুল ইসলাম, বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাসবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক

২৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, দুটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। রাজধানী, সিরাজগঞ্জ, যশোরসহ কয়েকটি শহরে শিরায় মাদকগ্রহণকারীদের রক্ত পরীক্ষা করে এমনটি দেখা গেছে। একটি জেলায় ৮৫ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৩৫ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪১।

জাতীয় এইচআইভি/এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬৭ জন পুরুষ সমকামীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত ছিল ৯ শতাংশ। কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষায় শনাক্তের হার আরও বেশি। এটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিরায় মাদকগ্রহণকারীরা নিজেদের মধ্যে সুই ভাগাভাগি করেন। এ কারণে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। তবে সমকামী পুরুষের মধ্যে কেন সংক্রমণ বেশি, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাসবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সমাজে পুরুষ সমকামীরা নিজেদের প্রকাশ করেন না। তাই তাঁদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া কঠিন। তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে গভীর অনুসন্ধান দরকার।’

আরও পড়ুন

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে এইচআইভি/এইডস নির্মূলের কথা বলা হয়েছে। এটি অর্জনের জন্য ৯৫-৯৫-৯৫ নামের একটি কৌশল ঠিক করা হয়েছে। অর্থাৎ অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির ৯৫ শতাংশকে শনাক্ত করতে হবে। শনাক্ত ব্যক্তিদের ৯৫ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির অনুমিত সংখ্যা ১৪ হাজার। ইতিমধ্যে ৬৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। দেশের সব জেলায় এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ২৩টি জেলায় এ পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।

আমাদের সমাজে পুরুষ সমকামীরা নিজেদের প্রকাশ করেন না। তাই তাঁদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া কঠিন। তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে গভীর অনুসন্ধান দরকার
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাসবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম

ইতিমধ্যে দেশে শনাক্ত ব্যক্তিদের ৭৬ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় এসেছে। অন্যদিকে চিকিৎসার মধ্যে থাকা ৯৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে। এই দুটি ক্ষেত্রে অর্জন সন্তোষজনক।

১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। গত বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৮ হাজার ৭৩২ জন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে ২০৫ জন মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব এইডস দিবসে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন তথ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।