আলো ছড়িয়ে গেছেন জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ

অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় মায়ের স্মৃতিচারণা করছেন বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ। ঢাকা, ২১ নভেম্বর
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রয়াত অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকিং নীতি সবক্ষেত্রে রেখে গিয়েছেন নিজের অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নারী অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের আলোয় আলোকিত হয়েছেন বহু মানুষ। সুফিয়া আহমেদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে এসব কথা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সুফিয়া আহমেদ হার লাইফ অ্যান্ড টাইমস’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছেলে ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ। এ সময় ১৯৬৯ সালের একটি ছবি প্রদর্শন করেন তিনি। সেখানে দেখা যায়, ৩৬ বছর বয়সে জাতিসংঘে বক্তব্য রাখছেন সুফিয়া আহমেদ।

সৈয়দ রিফাত আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাস, ব্যাংকিং নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, শরণার্থী সুরক্ষাসহ অনেক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সুফিয়া আহমেদ। পাশাপাশি সন্তানের জন্য ছিলেন সবচেয়ে বড় বন্ধু।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের বক্তব্যে উঠে আসে ব্যক্তি সুফিয়া আহমেদের কথা। তিনি বলেন, একজন সংগঠক, গবেষক হিসেবে সুফিয়া আহমেদের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্য। অনেক পরিচয় ছাপিয়েও তিনি একজন ভাষাসংগ্রামী—এটি তাঁর বড় পরিচয়। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিলেন।

ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলতেন সুফিয়া আহমেদ বাংলাদেশের গর্ব ও অহংকার। ব্যক্তি সুফিয়া আহমেদের ভেতরে ও বাইরে অসাধারণ এক সামঞ্জস্য ছিল।

অনুষ্ঠানে সুফিয়া আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জাহানারা হক চৌধুরী, একই বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হাবিবা খাতুন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফ খানসহ বিশিষ্টজনেরা।

আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক মাহফুজা আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুফিয়া আহমেদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক হুমায়ুন কবির।  

১৯৩২ সালে ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সুফিয়া আহমেদ। তাঁর বাবা মুহম্মদ ইবরাহিম ছিলেন একজন বিচারপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সুফিয়া আহমেদ ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক। বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালে তাঁর বিয়ে হয় সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে। ২০ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন স্মরণ করে আজ মঙ্গলবার (২১ তারিখ) এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। ২০২০ সালে সুফিয়া আহমেদ মারা যান।